জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর জেলায় ১৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন লালমি উৎপাদন হয়েছে।
Published : 05 Apr 2024, 09:44 AM
ফরিদপুরে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত ফল লালমি চাষে এলাকার চাষিরা সাবলম্বী হচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ফরিদপুরের সদরপুর থেকে বছরে ১৫ কোটি টাকার লালমি বিক্রয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, লালমি মূলত ফরিদপুরের কৃষকদের উদ্ভাবিত ফল। রং, স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ বিবেচনায় নিয়ে কৃষকই নাম রেখেছে লালমি।
চলতি মৌসুমে এখন ক্ষেত থেকে লালমি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এ মৌসুমে এর দাম ভালো পাওয়ায় খুশি তারা।
প্রতিবছর জেলার সদরপুর ও ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন উপজেলায় লালমির চাষ করা হয়। ৯০ দিনের এ ফসলের চাষাবাদে দিন দিন ঝুঁকছেন কৃষকরা। তবে এ বছর হঠাৎ করে বৃষ্টি এবং শীতের কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে।
সরজমিনে সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইউসুফ মোল্লার ডাঙ্গায় (গ্রাম) গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে সারি সারি স্তুপ করে রাখা লালমি। কৃষকরা ভোরে ক্ষেত থেকে পণ্যটি তুলে এক জায়গায় রেখেছেন। কয়েকশ চাষি ইউসুফ মোল্লার ডাঙ্গাতে এ কাজ করছেন।
লালমি দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মতো। দেখতে একই হলেও তা হাত দিয়ে ধরলে বা দেখলেই লক্ষ্য করা যায় যে, এতে বাঙ্গির মতো গায়ে কোনো শির নেই। রং এবং গন্ধও আলাদা। স্বাদেও আছে কিছু পার্থক্য।
লালমি আড়াই থেকে তিন মাসের মাঝেই পেঁকে যায়। লালমি সদরপুর উপজেলার কৃষকদের উদ্ভাবিত নিজস্ব ফসল। এই উপজেলার কৃষকরাই এই ফলের নাম দিয়েছেন লালমি।
কৃষ্ণপুরের লালমি চাষি হাবিব মোল্লা বলেন, জেলার মধ্যে সদরপুরে বেশি আবাদ হয়ে থাকে লালমি। ক্ষেত থেকে লালমি তুলে ক্ষেতের পাশের সড়কে রাখা হয়। সেখানেই ব্যাপারীরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া লালমি বিক্রির জন্য রয়েছে অস্থায়ী হাট।
তিনি বলেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও হাট-বাজারে যায় এই ফল। প্রতিদিন হাট থেকে ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হচ্ছে লালমি।
একই কথা জানান ওই গ্রামের কৃষক তরিকুল ও জব্বার আলী।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ও লালমি ব্যবসায়ী আইয়ুব ফকির জানান, মৌসুম চলাকালীন প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে লালমির হাট। চাষিরা তাদের লালমি নিয়ে আসেন হাটে, বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যান।
প্রকার ভেদে ১০০ লালমি এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে রমজানের প্রথম দিকে ১০০ লালমি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রয় হয় বলে জানান তিনি।
আইয়ুব ফকির বলেন, শুধু সদরপুরে প্রতিদিন ১০০ ট্রাকের বেশি লালমি বিক্রি হচ্ছে। তবে এই হাটগুলোতে নেই কোনো আড়তদার। সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান ব্যাপারীরা।
চাষিরা জানান, এবার রোজা ১০ দিন আগে শুরু হওয়ায় লালমি পরিপক্ব হয়ে ওঠেনি। ১০ রোজা থেকে লালমি তোলা শুরু হয়েছে। এক বিঘা (৫২ শতাংশ) জমিতে লালমি চাষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর এক বিঘা জমিতে ৮০ থেকে লক্ষাধিক টাকার লালমি বিক্রি হচ্ছে।
জেলায় এ বছর ১৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন লালমি উৎপাদন হয়েছে, যার বাজার মূল্যে ১৫ কোটি টাকার অধিক বলে জানালেন উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “জেলায় এ বছর ৫৩২ হেক্টর জমিতে লালমি আবাদ করা হয়েছে। লালমি তিন মাসের ফসল। এটা থেকে এ অঞ্চলের চাষিরা বাড়তি আয় করে। এর মাধ্যমে এখানকার চাষিরা আর্থ-সামাজির উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন।