নারায়ণগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

সোমবার দুপুরে উপজেলার সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বিক্ষোভ করে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2022, 07:14 PM
Updated : 26 Sept 2022, 07:14 PM

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রীরা। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন।  

সোমবার দুপুরে উপজেলার সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বিক্ষোভ করে।

দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীর নেতৃত্বে এ বিক্ষোভকালে প্ল্যাকার্ড হাতে ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অপসারণেরও দাবি তোলে।

ছাত্রীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক প্রায়ই তাদের সঙ্গে অসদচারণ করেন। নানা অজুহাতে ছাত্রীদের শরীরে হাত দেন। এ বিষয়ে কমিটির লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে জানিয়েও কোনো সমাধান না পেয়ে অবশেষে বিক্ষোভ করে তারা।

এ সময় ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও সম্প্রতি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়া খণ্ডকালীন দুই শিক্ষককে পুনরায় বিদ্যালয়ে আনারও দাবি তোলে।

দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীর মা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে বলেন, “রফিকুল ইসলামের কারণে ভালো ভালো শিক্ষকরা চলে যাচ্ছেন। বেতন মওকুফের আবেদন নিয়ে গেলেও তিনি খারাপ ব্যবহার করেন।”

তবে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কমিটির সদস্যের উস্কানিতে সামাজিকভাবে হেয় করতে মিথ্যা অভিযোগ করছে ছাত্রীরা।

রফিকুল ইসলাম বলেন, “দুই শিক্ষক সম্প্রতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তারা বিদ্যালয়ের নিয়ম মানেন না, বাইরে কোচিং করান এবং সময়মতো বিদ্যালয়ে আসেন না বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটির কাছে জানাই। পরে স্বেচ্ছায় ওই দুই শিক্ষক পদত্যাগ করেন।”

বিক্ষোভের পেছনে ওই দুই শিক্ষকের ইন্ধন আছে বলেও অভিযোগ তার।

তিনি বলেন, “২০১৯ সালে আমি এই স্কুলে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে খণ্ডকালীন ওই দুই শিক্ষকের কর্মকাণ্ডে অনিয়ম পাই। এই কারণে তাদের বেতনও বন্ধ করা হয়। তখন তারা আমাকে শাসিয়েছিলেন। কিন্তু আমি নিয়মের বাইরে যেতে পারব না বলে জানাই। কমিটির একজন সদস্যও আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

“সেই ক্ষোভ থেকেই কোমলমতি ছাত্রীদের ব্যবহার করেছে আমার বিরুদ্ধে। কারও চরিত্র নিয়ে অভিযোগ তোলার চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই। সেই অস্ত্রই তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”

এ বিষয়ে খণ্ডকালীন ওই দুই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সফর আলী ভূঁইয়া বলেন, “প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষক ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারাই ছাত্রীদের ব্যবহার করে বিক্ষোভে নামিয়েছেন; এমনটা আমি শুনেছি। তবে ছাত্রীরা যেহেতু অভিযোগ তুলেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম বলেন, “রোববার রাতে কয়েকজন ছাত্রী তার কাছে এসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তোলে।”

তখন এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে ছাত্রীদের আশ্বস্ত করেন তিনি। রাতে ছাত্রীরা আশ্বস্ত হলেও সোমবার দুপুরে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

এ নারী কাউন্সিলর বলেন, “স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্কুল পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলাপ করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ আমি করতে পারি। সেই বিষয়েই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু কারও ইন্ধনে ছাত্রীরা বিক্ষোভে যায়।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্কুল কমিটির লোকজন বুধবার বৈঠকে বসবেন। তখন ছাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, “প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিষয়টি আমরা পেয়েছি। দুই খণ্ডকালীন শিক্ষক চাকরি ছেড়েছেন।”

দিনি আরও বলেন, সত্য কিংবা মিথ্যা পরের বিষয়, কিন্তু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অভিযোগ খুবই সেন্সেটিভ। এ বিষয়ে বৈঠক ডেকেছে স্কুল কমিটি।

“সেখানে আমরাও উপস্থিত থাকব। উভয়পক্ষের ভাষ্য শোনার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”