নারায়ণগঞ্জে বিস্ফোরণ: শত বছরের পুরনো ভবনটি ছিল পরিত্যক্ত তালিকায়

সিটি করপোরেশন জানায়, আইনগত ও মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে ভবনটি সরকারিভাবে ভাঙা যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2023, 05:18 PM
Updated : 18 March 2023, 05:18 PM

নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে যে দোতলা ভবনটিতে বিস্ফোরণের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন সেটি শত বছরের; সেটি পরিত্যক্ত হিসেবে সরকারি তালিকাতেও ছিল।

তবে এটি ভাঙার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি ভবনটির মালিক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর।

স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার অসিত বরণ বিশ্বাস জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনের মালিক ইলিয়াস দেওয়ানকে নোটিস দেওয়া হলেও তিনি তা আমলে নেননি।

শনিবার সকাল ৯টার দিকে নিতাইগঞ্জের ডালপট্টি এলাকায় ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যাতে এক শ্রমিক নিহত হন।

এদিকে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা থেকে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের বোমা ডিসপোজাল টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

ওই বিস্ফোরণে আওলাদ (৪০) নামে এক শ্রমিক মারা গেছেন এবং অন্তত ১১ জন চিকিৎসাধীন আছে বলে জানিয়েছেন সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা৷

ব্যবসায়ীদের সংগঠন নিতাইগঞ্জ খুচরা ও পাইকারি বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, “ইলিয়াস দেওয়ানের মালিকানাধীন দোতলা ওই ভবনটির নিচতলায় চাল, ডাল, লবণসহ ভোগ্যপণ্য বিক্রির আটটি পাইকারি প্রতিষ্ঠান ছিল। ১০ বছর আগে উপরতলাটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেই এখানে বেচা-কেনা চলত। এমনকি উপরের তলায় শ্রমিকরা বসবাসও করতেন।”

এই ভবনের গোবিন্দ ভাণ্ডারে কাজ করা শ্রমিক শুক্কুর আলী বলেন, “উপরতলায় অন্তত ১৫-২০ জন শ্রমিক থাকতেন। নিহত আওলাদও ওপরের তলার একটি কক্ষে থাকতেন। ঘটনার সময় তিনি ভবনের ভেতরেই ছিলেন। চাপা পড়ে তিনি মারা যান।”

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, “ভবনটির উত্তর পাশে একটি গ্যাসের রাইজার ছিল। বিস্ফোরণের পরে দুপুরে রাইজারটি আমরা বন্ধ করেছি।”

Also Read: নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে বিস্ফোরণের পর ভবনে আগুন, নিহত ১

তিনি আরও বলেন, “পাঁচ বছর আগে সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি কমিটি জরাজীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় অর্ধশত ভবনের একটি তালিকা করে। ওই তালিকায় এই ভবনটিও ছিল। ভবনের মালিকদের তখন ভবন ভেঙে কিংবা সংষ্কার করার জন্য নোটিসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবন মালিক তাতে কর্ণপাত করেননি।”

তবে ভবনের মালিক ইলিয়াস দেওয়ানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন ধরেননি তার ভাই কামাল দেওয়ানও।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিকপক্ষ নিজ উদ্যোগে না ভাঙলে সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে ভাঙার নিয়ম রয়েছে।

তবে তালিকায় থাকার পরও কেন ভবনটি ভাঙা হয়নি এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, “এই বিষয়টি আসলে আমার জানা নেই। আমি এই বিষয়ে আগামীকাল খোঁজ নিয়ে তারপর মন্তব্য করতে পারব।”

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম বলেন, “ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় ছিল। কিছু আইনগত বাধা ও ভবন মালিকদের অংশীদারত্ব নিয়ে সমস্যা থাকায় ভবনটি সরকারিভাবে ভাঙা যায়নি। তবে আমাদের কড়া নির্দেশনা ছিল ভবনটি ব্যবহার না করার।”

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও হতাহতদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে। কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানোর পর একজন মারা যান। বেলা ১০টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

“ভবনটির পাশেই গ্যাস লাইনের রাইজার ছিল। গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমা হয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছি। ভবনটিও জরাজীর্ণ থাকায় সহজেই ধসে পড়ে।”

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, “আহতদের মধ্যে আওলাদ হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি লোড-আনলোড শ্রমিক ছিলেন।”