অপরাজিত টিটুই ময়মনসিংহের মেয়র

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় এক লাখ চার হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয় পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

ইলিয়াস আহমেদময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2024, 04:57 PM
Updated : 9 March 2024, 04:57 PM

আড়াই দশকের নির্বাচনি রাজনীতিতে অপরাজিত থেকেই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বার মেয়র পদে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ইকরামুল হক টিটু।

দুইবার কমিশনার, দুইবার পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করা টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়ে বিগত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিকে এবারও বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত করেছে নগরবাসী। 

শনিবার দিনভর ইভিএমে ১২৮টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ হয়। পরে নগরীর টাউন হলের তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়াম থেকে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন চৌধুরী।

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ১২৮টি কেন্দ্রে ইকরামুল হক টিটু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৪ ভোট; তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি প্রতীকের সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৬৩ ভোট।

এ ছাড়া অপর তিন প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের এহতেশামুল আলম পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৭৩ ভোট, হরিণ প্রতীকের রেজাউল হক পেয়েছেন ১ হাজার ৪৮৭ ভোট এবং জাতীয় পার্টির শহীদুল ইসলাম লাঙল প্রতীকের পেয়েছেন ১ হাজার ৩২১ ভোট।

এ সিটির মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন।

ইকরামুল হক টিটু ১৯৯৯ সালে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রথমবার কমিশনার হয়ে ময়মনসিংহ পৌরসভায় প্রবেশ করেন। এরপর ৪৮ বছরের টিটু আড়াই দশক ধরে বিভিন্ন পদে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।

এই দীর্ঘ সময়ে কখনও তাকে নির্বাচনে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়নি। অপরাজিত থেকেই তিনি ২০২৯ সাল পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য জনগণের রায় পেলেন। 

ইকরামুল হক টিটুর জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ অগাস্ট ময়মনসিংহে। তার বাবা মৃত আলহাজ ফজলে হক এবং মা মৃত মানোয়ারা খাতুন। এই দম্পতির পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে টিটু সর্বকনিষ্ঠ।

ময়মনসিংহ প্রি ক্যাডেট হাইস্কুল, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এবং মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পড়াশোনা শেষ করেন।

পরে টিটু আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং একই কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজ জীবনেই তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হন।

টিটু তার জনপ্রতিনিধির জীবন শুরু করেন ১৯৯৯ সালে নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার হিসেবে। ২০০৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো কমিশনার নির্বাচিত হন এবং পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনোনীত হন।

২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মাহমুদ আল নূর তারেক মারা যান। তখন শূন্য পদে ইকরামুল হক টিটু ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। এরপর নির্বাচিত হয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

এ সময় ময়মনসিংহ পৌরসভা বর্ধিত এলাকা নিয়ে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত হয়। ২০১৮ সালে তিনি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান।

২০১৯ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র পদে নির্বাচিত হন। সেবার শুধু কাউন্সিলর পতে ভোট হয় এই সিটি করপোরেশনে।

ইকরামুল হক টিটু ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে একই কমিটির সহসভাপতি ছিলেন।

ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী পন্ডিতপাড়া ক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়- ময়মনসিংহের সিন্ডিকেট সদস্য, প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুলের পরিচালনা পর্যদের সভাপতি ছাড়াও অসংখ্য সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইকরামুল হক বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত। তার সহধর্মিনী নাছিমা আক্তার মিলা ময়মনসিংহ উইমেন্স চেম্বার অব কর্মাসের পরিচালক।

টিটুর বড় ভাই মো. ইমদাদুল হক পেশায় একজন চিকিৎসক। মেজো ভাই আমিনুল হক শামীম ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং এফবিসিসিআই এর সহসভাপতি।