গোপালগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর প্রদর্শনের সূচনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী রেলপথে দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করেন। রেলপথ নিরাপদ করার উপায় খোঁজারও তাগিদ দেন তিনি।
Published : 01 Aug 2022, 06:31 PM
রেললাইনে চলাচলে অসতর্কতার বিষয়টি তুলে ধরে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন।
সোমবার গোপালগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “ট্রেন নিজের পথে চলে। অন্যের পথে কখনও ট্রেন চলে না। ট্রেন কখনও কাউকে ধাক্কা দেয় না। অন্যরা ট্রেনকে ধাক্কা দেয়। অন্যরা বরং রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে চলাচল করে। তাহলে তাদের দায়িত্ব, জনগণ ও জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। ট্রেনকে ধাক্কা দিয়ে কেউ যদি দুর্ঘটনা ঘটায়, এ দায় কি রেলের?”
মন্ত্রী বলেন, “রেলে ব্যারিকেড বা গেট দেওয়া হয় অন্যের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য না, রেলকে কেউ যাতে অনিরাপদ করতে না পারে, রেলের নিরাপত্তার জন্যই এসব গেট দেওয়া হয়।
“রেললাইনের ওপর দিয়ে পথ বানিয়ে যারা চলাচল করেন, তাদের উচিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কারণ ট্রেন যখন চলে, তখন রেল আইন মতে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ১৪৪ ধারা অমান্য করে কেউ যদি লাইনে উঠে যায়, তাহলে অপরাধ তার, ট্রেনের নয়। ট্রেন তো বড় গাড়ি। তাই অনেকেই না বুঝে রেলের দোষ দেয়।”
দেশের রেললাইনে প্রায়ই জানমালের ক্ষতি হয়। রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানের অবহেলা-অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে হতাহত হন অনেকে। সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের খৈয়াছড়া লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়া একটি মাইক্রোবাসকে ঠেলে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায় আন্তঃনগর মহানগর প্রভাতী ট্রেন। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন, ছয়জন চিকিৎসাধীন আছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
মন্ত্রী নূরুল বলেন, কোনো মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়। কোনো দুর্ঘটনাই কাম্য নয়। এ দুর্ঘটনা রেলের নয়। ট্রেন যদি নিজের লাইন রেখে অন্যের বাড়িতে ঢুকে পড়ে, তাহলে এটা ট্রেনের দুর্ঘটনা হবে। তার দায়িত্ব রেল নেবে।
“কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, উপজেলা, পৌরসভা ও গ্রামীণ রাস্তা রেল ক্রস করেছে। সেখানে কী ব্যবস্থাপনার মধ্যে আমরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব, কোনো দুর্ঘটনা যাতে না হয়, সেইটা এককভাবে রেলের ওপর না দিয়ে যৌথভাবে কিভাবে নিশ্চিত করতে পারি, সেই ব্যবস্থা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।”
গোপালগঞ্জ রেলস্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেশব্যাপী প্রদর্শনের সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেন, “একটি ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। যে দেশ যত উন্নত, সে দেশের রেলপথ তত উন্নত। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে রেলকে পুনর্গঠনের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করেন। রেল মন্ত্রণালয় রেলের উন্নয়নে নতুন নতুন পথ তৈরি করেছে।
আগামী ডিসেম্বরে খুলনার সঙ্গে মোংলার রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চালু করা হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে পর্যটকরা ট্রেনে করে কক্সবাজার যেতে পারবেন।”
গোপালগঞ্জের ডিসি শাহিদা সুলতানা, রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান অনুষ্ঠানে ছিলেন।
বেলা ১টায় রেলমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শোকাবহ অগাস্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি সুরা ফাতেহা পাঠ করে বঙ্গবন্ধু ও ৭৫-এর ১৫ অগাস্টে শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করেন।