পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি, রাজশাহীতে যুব গেমসের কোচসহ ১২ জন গ্রেপ্তার

তাদের বিরুদ্ধে এক পুলিশ সদস্যকে পেটানো এবং তার স্ত্রীর স্বর্ণের চেইন চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2023, 07:19 PM
Updated : 5 March 2023, 07:19 PM

রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে হাতাহাতির জেরে সদ্য সমাপ্ত যুব গেমস থেকে ফেরা ১১ খেলোয়াড় ও একজন কোচকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তাদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক ছয় খোলোয়াড় ও একজন কোচকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়; পাঁচ খেলোয়াড় অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়, যেখানে সোমবার শুনানির পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।   

রোববার দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এই ঘটনা ঘটে বলে রেলওয়ে থানার ওসি গোপাল কুমার জানান।  

গ্রেপ্তার ১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনজন ছেলে ও আটজন মেয়ে। তাদের মধ্যে ছয়জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি।

এরা হলেন আলী আজম (১৯), আকাশ আলী মোহন (২০), রিমি খানম (১৯), পাপিয়া সারোয়ার পূর্ণিমা (১৯), মোছা. দিপালী (১৯) ও সাবরিনা আক্তার (১৯)।

অন্য পাঁচ জনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।

তাদের কোচের নাম আহসান কবীর (৪৫)।

পুলিশ জানায়, মামলায় এই ১২ জন ছাড়াও রমজান (১৯) নামের আরেক খেলোয়াড়কেও আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এই খেলোয়াড়েরা জুডো, কুস্তি, কারাতেসহ বিভিন্ন খেলা খেলেন। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি। তাদের বিরুদ্ধে একজন পুলিশ সদস্যকে পেটানো এবং তার স্ত্রীর স্বর্ণের চেইন চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে।

মামলার বাদী পুলিশের কনস্টেবল গোলাম কিবরিয়ার (৩০) স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। তাদের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী খেতুর গ্রামে। কিবরিয়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত।

মামলার বরাতে রাজশাহী রেলওয়ে থানার ওসি গোপাল কুমার জানান, রোববার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা জয়াকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন কনস্টেবল কিবরিয়া। দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গোলাম কিবরিয়াকে মারধর করা হয়। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে থানা পুলিশ সবাইকেই থানায় নিয়ে যায়।

বিকালে গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১২ জনকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।

গ্রেপ্তার ১৭ বছর বয়সী এক নারী খোলোয়াড়ের চাচা বেলাল হোসেন বলেন, তার ভাতিজিসহ এই খেলোয়াড়রা ঢাকায় যুব গেমস খেলতে গিয়েছিলেন। খেলে পুরস্কারও পেয়েছেন। খেলা শেষে তারা রোববার ধুমকেতু ট্রেনে আসছিলেন।

তিনি বলেন, “খেলোয়ারদের সবার ২৬ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ছিল একটি লাগেজে। ট্রেনে সেটি খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন তারা ট্রেনে লাগেজটি খুঁজছিল। ওই সময় সিভিলে থাকা পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে এক মেয়ে খেলোয়াড়ের কথা কাটাকাটি হয়।

“এক পর্যায়ে ওই পুলিশ সদস্য মেয়েটিকে থাপ্পড় মেরে দেয়। এছাড়া আরেক ছেলে খেলোয়াড়কেও মারে। দুপুরে স্টেশনে নামার পর তাদের আবারও হাতাহাতি হয়।”

তিনি বলেন, এরপর পুলিশ দুই পক্ষকে মীমাংসার কথা বলে থানায় নিয়ে যায়। পরে মামলা করা হয়।

রাজশাহী রেলওয়ে থানার ওসি গোপাল কুমার বলেন, মারামারিতে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাক ফেটে গেছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মামলায় তার স্ত্রী দাবি করেছেন, স্বামীকে মারধরের সময় তার গলার চেইন চুরি করে নেওয়া হয়েছে। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে কিবরিয়ার ভাই গোলাম সারওয়ার এবং সারওয়ারের বন্ধু সাব্বির ইসলামকে।

গোলাম সারওয়ার বলেন, ট্রেনের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন থেকে আগে নামাকে কেন্দ্র করে স্টেশনে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মেরে তার ভাইয়ের নাক ফাটানো হয়েছে।

ওসি গোপাল কুমার আরও বলেন, “এতগুলো খেলোয়াড়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর সাহস আমার নেই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা নিয়েছি। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোচ এবং খেলোয়াড়দের আদালতে পাঠিয়েছি।”

এদিকে, রাত ৮টার দিকে সাত জনকে রাজশাহীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচ জনকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ তোলা হয়। আদালত তাদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জামিন দেয়। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী মাইনুল ইসলাম জানান, এই শিশুদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ তোলা হয়েছিল। শিশুদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। এজাহারে যা আছে তা-ও জামিনযোগ্য। রাত হয়ে যাওয়াই পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। তাই আদালতের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান তাদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন জামিন দিয়েছেন।

সোমবার আদালতে জামিন আবেদনের পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে; তারপর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন বলে তিনি জানান।

জেলা জজ আদালত পুলিশের পরিদর্শক পরিমল চক্রবর্তী জানান, প্রাপ্তবয়স্ক ছয়জন খেলোয়াড় ও কোচকে রাতে রাজশাহীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. লিটন হোসেন আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাতেই তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।