বৃষ্টির সাথে সাথে জেলায় ঝড়ো হাওয়াও বইছে। ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার বেগে বাতাস হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
Published : 17 Nov 2023, 11:22 AM
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বরিশালে মাঝারি বৃষ্টিপাত চলছে। সাথে রয়েছে ঝড়ো হাওয়া। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক বশির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরিশালে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃষ্টির সাথে সাথে জেলায় ঝড়ো হাওয়াও বইছে। ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার বেগে বাতাস হচ্ছে। সন্ধ্যা নাগাদ বাতাসের গতি ও বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন এ আবহাওয়াবিদ।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে বরিশালের জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। বৃষ্টিপাতের কারণে বেড়েছে শীতের প্রকোপও।
নগরীর বাসিন্দা ও সাংবাদিক তন্ময় তপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন। তারমধ্যে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে নগরীর সড়ক জনশূন্য। দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর উপ-পরিচালক ও বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় সকাল থেকে ৬৫ ফুটের নীচের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল ।
“এখন বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় আগাম সতর্কতা হিসেবে অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মিধিলি মোকাবেলায় বরিশাল জেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাও হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সম্ভাব্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার ৫৪১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে বলে জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও জানান, প্রয়োজন হলে উপজেলাগুলোতে থাকা সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দাপ্তরিক ভবন ও পাকা স্থাপনাগুলো ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া উদ্ধারকাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেচ্ছাসেবকরাও প্রস্তুত রয়েছেন।
এছাড়া মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং নগদ টাকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিভাগীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ মোকাবেলায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার আশ্রয়কেন্দ্র এরই মধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেইসাথে ছয় হাজার ২৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এক হাজার ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়ের জন্য খোলা রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
বিভাগের আশ্রয়কেন্দ্রেই প্রায় ১৩ লাখ মানুষ ও দেড় লাখের অধিক পশু আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া পশুদের জন্য বিভাগের ৫২টি মুজিবকেল্লাও প্রস্তুত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগের ১ হাজার ৮৪৫টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে আগে থেকেই। আর যে কোনো ধরনের উদ্ধার কাজে বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায় ৩২ হাজার ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
এছাড়া বিভাগে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) এর দেড় হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি বিভাগের দুটি নৌ স্টেশনসহ ৪২টি স্টেশনসহ সাড়ে ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান।