কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৭৮ হাজার গবাদি পশুর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
Published : 18 Jun 2023, 05:16 PM
কুষ্টিয়ায় কোরবানির বাজারের জন্য প্রস্তুত করা এক লাখ ৭৮ হাজার গবাদিপশু মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। এবার দুই হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
প্রতিবারের মতো এবারও এ জেলায় দেশি পদ্ধতিতে গরু ও ছাগল পালন করা হয়েছে। প্রান্তিক চাষি কিংবা খামারিরা ধারদেনা করে বছর শেষে বাড়তি কিছু সঞ্চয়ের আশায় এসব পশু লালন-পালন করে থাকেন। কিন্তু এ বছর পশু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় লাভ নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় খামারিরা।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, কোরবানি উপযোগী গরু কিংবা ছাগলের বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় এবার ঊর্দ্ধমুখী।
মিরপুর উপজেলার সদরপুর গ্রামের কৃষক শহিদুলের স্ত্রী হাফিজা খাতুন বলেন, “প্রতি বছরের মত এবারও তিনটি দেশি জাতের ষাঁড় পালন করেছি। অন্যান্য বছর ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের ব্যাপারিরা বাড়ি থেকে গরু কিনে নিয়ে গেছেন। এবার এখনও আসেন নাই।
“এরই মধ্যে গো-খাদ্যের দোকানে অনেক টাকা বাকি হয়েছে। গরু বেচা সেই টাকা দিয়ে শোধ করব। যে টাকা থাকবে তা দিয়ে আবার ছোট কয়েকটা গরু কিনলে আর কিছুই থাকবে না।”
ভেড়ামারা উপজেলার সলক মণ্ডল জানান, “গুড় তো গুড়, গুড়ের বাটিশুদ্ধি গায়েব হওয়ার দশা। গত বছর কোরবানির ঈদের পর সাড়ে ৪ লাখ টাকায় ছয়টা গরু কিনিছিলাম, প্রতিটা গরুর জন্য দিনে খাওয়া খরচ হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
“বছরে একটা গরু বড় করতি খরচই হয়ে যায় ৮০-৯০ হাজার টাকা। সমিতির ঋণের টাকা সুদসহ দিতি হবি, এখন দুটি গরু বিক্রি করলাম ১ লাখ এবং ৯০ হাজার ট্যাকায়; তালি তো ঘড়বাড়ি বেচি সব টাকা শোধ করা লাগবিনি।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খামারিরা ব্যাংক বা এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পশু পালন করে থাকেন। এমনকি ঋণ নিয়ে প্রান্তিক চাষিরাও বাড়িতে একটা কিংবা দুটা করে গরু পালন করছেন।
প্রতিটি গরুর খাদ্য বাবদ প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ব্যয় করতে হয়। নিজে খান বা না খান ধারদেনা করে হলেও পশুকে খাওয়াতে হয়েছে। তবে এবার পশু বিক্রি করে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন চাষি ও খামারিরা।
মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সোহাগ রানা বলেন, গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় চাষিরা একবার কাঙ্ক্ষিত লাভ করতে পারছে না। যারা ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পশু পালন করেছেন তারা বেশি সংকটে পড়বেন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় কোরবানির বাজারে বিক্রি উপযোগী ১ লাখ ৭৮ হাজার গবাদিপশু রয়েছে; যার মধ্যে ৭০ হাজার ছাগল ও ভেড়া। এসব পশুর বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
মোট পশুর ৩০ শতাংশ হলেই জেলার চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে; বাকি ৭০ শতাংশ জেলার বাইরে বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সরবরাহ করা হয়, বলেন সিদ্দিকুর রহমান।
তবে খামারিদের দাবি অনুযায়ী, এ বছর বিক্রয়যোগ্য পশুর উচ্চ বাজার মূল্য পেলেও এর সিংহভাগ টাকা খরচ হয়েছে লালন-পালনে। এ ক্ষেত্রে খামারিদের ক্রয় করা দানা জাতীয় খাদ্যের ব্যবহার কমিয়ে ঘাস জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান এ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।