কুমিল্লার রুমাকে হত্যা করে ‘শ্বশুরবাড়ির’ লোকজন

২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর দাউদকান্দির বারপাড়ায় একটি কবরস্থান থেকে রুমা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2023, 06:28 PM
Updated : 24 Jan 2023, 06:28 PM

মরদেহ উদ্ধারের এক বছরের বেশি সময় পর কুমিল্লার গৃহবধূ রুমা বেগমকে হত্যার রহস্য উন্মোচনের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়ায় একটি কবরস্থান থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

ওইদিনই মরদেহ মর্গে পাঠানো হলে স্বজনরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই নারীকে শনাক্ত করেন।

রুমা বেগম (৩৫) নামের ওই নারী দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. দুলাল মিয়ার মেয়ে এবং একই উপজেলার ভিটি চারীপাড়া গ্রামের প্রয়াত মোস্তফা মিয়ার স্ত্রী। সিয়াম হোসেন নামে ১৩ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে তার।

তিন মাসের তদন্তে থানা পুলিশ হত্যার নেপথ্যের কারণ জানতে পারেনি। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ঘটনার তিন মাস পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লা।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ চেষ্টার পর তারা এই হত্যাকণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সফল হয়েছেন। লাশ উদ্ধারের দুইদিন আগে ২১ নভেম্বর সকালে ওই নারীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করে। এরপর দিনভর লাশ ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রেখে ওইদিন রাতে মানিককান্দি ভুঁইয়া বাড়ির কবরস্থানে ঝোপের মধ্যে ফেলে আসে।

হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে নিহতের ভাসুর সাফায়েত হোসেন ওই বিধবা নারীর বাবার বাড়ি গিয়ে খবর দেন যে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর পরদিন থানায় নিখোঁজ হওয়ার জিডি করেন শাশুড়ি রূপসী বেগম।

মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় গত বছরের ২৪ অগাস্ট নিহতের ভাসুর সাফায়াতকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খোলেননি। তবে তার কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হয়েছে। সবশেষ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে বিধবা নারীর শ্বশুর বাড়ি থেকে আরেক ভাসুর জীবন মিয়ার স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর থেকে পালিয়ে থাকা জ্যোৎস্না গত রোববার রাতে গোপনে বাড়ি আসেন।

“সোমবার বিকালে হত্যাকাণ্ডের পুরো বর্ণনা দিয়ে কুমিল্লার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জ্যোৎস্না।”

সন্তানককে শাসন করা নিয়ে ভাসুর সাফায়েত, ভাগিনা আল-আমিনসহ শ্বশুরবাড়ির কয়েকজন মিলে রুমাকে হত্যা করে বলে তদন্তে উঠে আসে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লার পিবিআইয়ের এসআই সাফায়েত আহাম্মদ বলেন, প্রায় ১১ বছর আগে নিহত রুমার স্বামী মারা গেছেন। তদন্তে জানা গেছে একমাত্র সন্তানের দিকে চেয়ে তিনি শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। কিন্তু প্রায়ই ভাসুর সাফায়েত তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। কিছু হলেই মারধর করতেন।

“ঘটনার দিন সাফায়েতই ছিলেন মূল হত্যাকারী। সাফায়েত আর তার ভাগিনা আল-আমিন রাতে গিয়ে ওই কবরস্থানে ঝোপের মধ্যে লাশ ফেলে আসে।”

পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সকালে ডাল রান্না না করায় ছেলে সিয়াম তার মা রুমা আক্তারের সঙ্গে রাগ করে চিৎকার-চেঁচামেচি করে। এতে বিরক্ত হয়ে মা ছেলেকে একটি চড় দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাশুড়ি পুত্রবধূ রুমাকে চড় দেন; এক পর্যায়ে রুমাও উত্তেজিত হয়ে শাশুড়িকে লাথি মারেন। ঘটনার সময় সাফায়েত, তার মা রূপসী বেগম, পুত্রবধূ জ্যোৎস্না, কহিনুর আক্তার, সুমি আক্তার আর সাফায়েতের ভাগিনা আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সাফায়েত ওই নারীকে মারধর করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সঙ্গে সঙ্গে মারা যান।