প্রচণ্ড তাপদাহে অপরিপক্ব লিচু গাছে ফেটে যাচ্চে, আর কিছু অংশ রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে; লোকসান কমাতে চাষিরা পাকা-আধাপাকা লিচু নামাচ্ছেন।
Published : 07 Jun 2023, 07:20 PM
প্রচণ্ড গরমে নানাভাবে লিচু নষ্ট হওয়ায় এবার দিনাজপুরের চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। এছাড়া স্বল্প পরিসরে ফলের বাজার হওয়ায় পরিবহনেও একটি অংশ নষ্ট হচ্ছে বলে তাদের ভাষ্য।
এ কারণে ফল ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।
চাষিরা জানান, অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড গরমের কারণে এবার লিচুর ফলন কম হয়েছে। তা ছাড়া প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে ফলের একটি অংশ গাছে অপরিপক্ব অবস্থায় ফেটে যাচ্চে, আর কিছু অংশ রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। তাই লোকসান কমানোর আশায় চাষিরা গাছ থেকে ক্রমান্বয়ে [পাকা লিচু আগে নামানো] লিচু না নামিয়ে দ্রুত নামাতে শুরু করেন–একসঙ্গে অনেকগুলো; অর্থাৎ পাকা-আধপাকা লিচু নামিয়ে নিচ্ছেন। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি। ফলে চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন না।
বাগান মালিক আরও ফল ব্যবসায়ীরা এবার লিচুর বাজারে ভালো নেই বলে জানিয়েছেন।
বাগান মালিক মোসাদ্দেক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন কম হয়েছে এবং দানাও ছোট হয়েছে। যখন লিচু পরিপক্ব হয়ে গাছ থেকে নামাবার সময় হয়েছে, তখন তাপদাহ আরো তীব্র হওয়ায় গাছেই লিচু জ্বলে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এবার শহরের কালিতলায় স্বল্প পরিসরে লিচু মার্কেট স্থাপন করায় প্রচণ্ড যানজটের কারণে লিচুর গাড়ি আড়তে প্রবেশ করতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগছে। এখানেও গরমে বেশ কিছু ফল জ্বলে যায় এবং নষ্ট হয়। ফলে আড়তে অনেক কম দামে লিচু বিক্রি করে লোকসান গুনছেন কৃষক।
তিনটি বাগানের মালিক মোজাফ্ফর আহমদও একই কথা বলছেন।
তিনি জানান, মাদ্রাজী লিচু সাধারণতা নামানো হয় মে মাসের শেষের দিকে আর বেদেনা নামানো হয় জুনের প্রথম দিকে। কিন্তু গরমে গাছে নষ্ট হতে শুরু করায় কৃষকরা এবার মাদ্রাজী লিচু নামাতে শুরু করেন মে মাসের প্রথম দিকে; আর বেদেনা নামান মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে।
তিনি বলেন, মাদ্রাজী লিচু প্রথম দিকে প্রতি হাজার ২২শ/২৪শ টাকায় বিক্রি হয়েছে; এখন সেই লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার ৫শ/৬শ টাকায়। মে মাসের শেষ দিকে বেদেনা বিক্রি হয়েছে ৮/৯ হাজার টাকায়; এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়।
মোজাফ্ফরের ভাষ্য, “গাছে রাখলে তাপদাহে জ্বলে যাচ্ছে, আবার বাজারে আনলে দাম নেই। এর আগে বড় মাঠে লিচুর বাজার স্থাপন করায় আমরা ভালো দাম পেয়েছি। সেখানে আমরা সহজেই আড়তে পৌছাতে পারতাম এবং লিচু বিক্রি করতে পাতাম। এখন ছোট পরিসরে বাজার হওয়ায় এক গাড়ি লিচু আড়তে প্রবেশ করতে সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। তীব্র তাপদাহে এতে লিচু নষ্ট হচ্ছে এবং চাষিরা দাম পাচ্ছে না।”
ফল ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দও লিচুর বাজারের এই অবস্থার জন্য বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে ছোট পরিসরে ফলের বাজারকে দায়ী করছেন।
কালিতলা ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রুস্তম আলী বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লিচুবাহী গাড়ি আড়তে সময়মত পৌঁছাতে পারছে না। তীব্র তাপদাহের কারণে আড়তে পৌঁছার আগে যানজটে আটকে থেকে লিচু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষক-আড়তদার উভয়ের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দিনাজপুর জেলায় এবার সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন পৌনে ২০০ থেকে ২০০ ট্রাক লিচু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।