আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জেএসএসের উষাতন তালুকদার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন; তিনিও সরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
Published : 15 Dec 2023, 07:40 AM
জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন সময় সাড়ম্বরে অংশ নিলেও এবারের ভোটে পাহাড়ের প্রভাবশালী আঞ্চলিক দলগুলো নিজেদের একপ্রকার গুটিয়েই রেখেছে; যে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আসনে নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তাপ আর আলোচনা প্রায় নেই বললেই চলে।
ভোট করার পরিকল্পনা থেকে পাহাড়ে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস একমাত্র দল হিসেবে মনোনয়নপত্র নিয়েছিল।
শুধু রাঙামাটি আসন থেকে প্রার্থী হতে দলটির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এ নিয়ে আলোচনা থাকার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সাবেক এ সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, নীতিগতভাবে এ নির্বাচন থেকে তারা সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দলের সিদ্ধান্ত মেনে শুক্রবারই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে আবেদন করবেন বলে বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তিনি। হঠাৎ করে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ফের বদল হওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে তিনি জানান।
জেএসএস নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখলেও অন্য পাহাড়ি দলগুলো আগে থেকেই নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে একেক দল একেক কারণ তুলে ধরে তাদের বক্তব্য দিচ্ছে।
আরেক পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি আসন থেকে সবকটি জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ এবার সেখানে মনোনয়নপত্র নেয়নি। রাঙামাটি ও বান্দরবানেও একই অবস্থা । ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকেই পাহাড়ের কোনো আসনে তাদের প্রার্থী নেই।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক রাজনীতি ও দাবি আদায়ে সোচ্চার এসব দল ও সংগঠনের কয়েকটির নেতারা পাহাড়ে নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে দাবি করেছেন।
তবে তিনটি আসনেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা তা মানছেন না।
প্রধান দুই দল জেএসএস ও ইউপিডিএফের বাইরে প্রার্থী দেয়নি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া অংশটিও।
পাহাড়ের রাজনীতিতে সরব ভূমিকা রাখা জেএসএস-এমএন লারমা নামের এ দল বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমর্থক হলেও কোনো প্রার্থী দেয়নি; নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কথাই বলেছে শুধু।
আর প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ থেকে বেরিয়ে যারা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামের সংগঠনটিও ভোটের লড়াই থেকে বিরত থাকছে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, জাকের পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল পার্বত্য তিনটি আসনেই প্রার্থী দিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে। আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।
জেএসএস ও ইউপিডিএফ নেতারা বলছেন, এ নির্বাচন কমিশনকে তারা আস্থায় নিতে পারছেন না। পাহাড়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা এই কমিশনের পক্ষে সম্ভব না বলে মনে করছেন তারা।
এছাড়া সরকারের দমনপীড়ন, দলীয় নেতাদের বিভিন্ন মামলায় আসামি করাসহ অনেকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলেও জানান দলগুলোর নেতারা।
যদিও পাবর্ত্য অঞ্চলের আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া তাদের দলগত সিদ্ধান্ত।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো পাহাড়ের নির্বাচনের পরিবেশ আছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
প্রভাব পড়বে ভোটার উপস্থিতিতে?
পার্বত্য তিনটি আসনে মোট ভোটার প্রায় ১২ লাখ ৭৮ হাজার। এর মধ্যে রাঙামাটিতে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫৪, খাগড়াছড়িতে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪১৯ এবং বান্দরবানে রয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯ জন। তাদের প্রায় অর্ধেক পাহাড়ে বসবাসরত ১৩টি নৃগোষ্ঠীর সদস্য।
অতীতের জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর এলাকাভেদে নৃগোষ্ঠীর ভোটের উপর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যে কারণে বিগত সময়ের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জেএসএস বা ইউপিডিএফের প্রার্থীরা লড়াই করেছেন। যদিও সংগঠনগুলো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত নয়; ফলে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়াই করে।
এছাড়া তিন জেলায় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আঞ্চলিক দলগুলোর নেতারা নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনও করছেন। ফলে ভোটের মাঠে তাদের শক্তিশালী অবস্থানই দেখা গেছে।
ভোটারদের একটা অংশ মনে করছেন, যদি এই আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থকরা কেন্দ্রে না যান তাহলে ভোটার উপস্থিতিতে তার একটা প্রভাব পড়বে। তুলনামূলকভাবে কম ভোটাধিকার প্রয়োগ হবে বলে ধারণা তাদের।
যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে এখানে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারাও নৃগোষ্ঠীর সদস্য। রাঙামাটিতে চারবারের সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার, খাগড়াছড়িতে দুইবারের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এবং বান্দরবানে ছয়বারের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং প্রার্থী হয়েছেন।
এরপরও এবার পার্বত্য তিন আসনে ভোটের মাঠে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো না থাকলে নির্বাচন অনেকটাই জৌলুস হারাবে এবং প্রতিযোগিতাহীন ও পরোক্ষভাবে একতরফা হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ভোটাররা।
পাবর্ত্য জেলার প্রথম সাংসদ এম এন লারমা
নৃগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে রাজনৈতিক সংকটের শুরু সেই স্বাধীনতার পর থেকেই। সেই সময় পাহাড়ের অবিসংবাদিত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা) স্বাধীনতাত্তোর প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্যও ছিলেন। তিনি ও তার সহযোদ্ধারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর একপর্যায়ে পাহাড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রায় আড়াই দশকের এই সংঘর্ষে বারবার পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে গেছে রক্ত আর হিংসার ধারা।
১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করে। এই চুক্তির বিরোধিতা করে জেএসএস থেকে কিছু কর্মী বেরিয়ে পরের বছর জুনে ইউপিডিএফ নামে নতুন দল গঠন করে।
পরে এ দুটি দল আরও বিভক্ত হয়। পাশাপাশি চুক্তির পর গত আড়াই দশকে পাহাড়ে আরও কয়েকটি দলের জন্ম হয়েছে। পাহাড়ের প্রায় প্রতিটি আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধেই সশস্ত্র কার্যক্রমের অভিযোগও পুরনো।
সরে যাচ্ছে জেএসএস-সন্তু লারমা
পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর দেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০০১ সালে। সেই অষ্টম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি চুক্তিকারী সংগঠন জেএসএস। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা প্রথম প্রার্থী দেয়।
সংগঠনের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার সংগঠনের শক্তিশালী অবস্থান থাকা রাঙামাটি আসন থেকে নবম, দশম ও একাদশ নির্বাচনে অংশ নেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছিলেন। জেএসএস থেকে অবশ্য এবার রাঙামাটি ছাড়া অন্য দুটি আসনে কোনো নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।
ধারণা করা হচ্ছিল, আগের নির্বাচনগুলোর ধারাবাহিকতায় ঊষাতন তালুকদার এবারও শক্ত লড়াই করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেএসএস এ নির্বাচন থেকে তাদের প্রার্থী সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেএসএস নেতা বলেন, বৃহস্পতিবারই তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করতেন। কিন্তু ‘টেকনিক্যাল কারণে’ সেটা শুক্রবার করা হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঊষাতন তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচন না করার, তাই আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব। আমি এখন ঢাকায় আছি, কাল (শুক্রবার) ফিরে আইন অনুসারে প্রত্যাহারের আবেদন করব।”
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর কেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, “এটা আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। সেই মোতাবেক আমি আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করব।”
তবে জেএসএসের একাধিক নেতা জানান, সারাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করাসহ বেশ কিছু কারণে আগেই নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত ছিল সংগঠনের।
তবু আন্তর্জাতিক চাপ ও নানাবিধ কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বদলাতে পারে এমন আশায় মনোনয়নপত্র নিয়েছিল দলটির প্রার্থী। কিন্তু পরিস্থিতি না বদলানোয় আগের সিদ্ধান্তেই ফিরে যাচ্ছে দলটি।
এ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে নিজেদের শঙ্কার কথা বলেছেন জেএসএস নেতারা।
বান্দরবানেও দলটির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলায় তাদের প্রার্থী ছিল।
আত্মগোপনে থাকা জেলার এক জ্যেষ্ঠ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রার্থী ছিল। ভোটার ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই এলাকাছাড়া। এখন ভোটের পরিবেশ নেই। শেষ পর্যন্ত এটাও এক ধরনের একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে।”
জেএসএসের সহসাধারণ সম্পাদক উ উইন মং মারমা (জলি মং) বলেন, “২০০৮ সালে জনসংহতি সমিতি বান্দরবান আসনে একক প্রার্থী দিয়েছিল। এখন ভোটের কোনো পরিবেশ নেই।”
ইউপিডিএফ যাচ্ছে না ২ কারণে
জেএসএস থেকে বেরিয়ে সংগঠন ঘোষণার পর ২০০১ সালেই নির্বাচনে অংশ নেয় ইউপিডিএফ। সেবার সংগঠনের প্রধান প্রসীত খিসা খাগড়াছড়ি আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ৩৭ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সেবার তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হননি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবার প্রার্থী হয়ে প্রায় ৬৮ হাজার ভোট পান এবং দ্বিতীয় হন।
তবে এ সময়ে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে দলটির নেতাকর্মীরা নিয়মিতই অংশ নেন। কেউ কেউ নির্বাচিতও হয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ নেতা নতুন কুমার চাকমা সেখানে প্রার্থী হন এবং ৬০ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন।
খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। পাশাপাশি এখানে জেএসএস-এমএন লারমা ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকও শক্তিশালী।
এবারের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপিডিএফ এর মুখপাত্র অংগ্য মারমার দাবি, “আমরা দুটি কারণে এবার নির্বাচনে যাইনি। প্রথমত: আমরা বিশ্বাস করি না যে, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। গত ১৫ বছরে তারা দেশের নির্বাচন সিস্টেমকে নষ্ট করে দিয়েছে এবং তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনাই নাই।
“দ্বিতীয়ত: পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার যে দমপনপীড়ন অব্যাহত রেখেছে, আমাদের অসংখ্য কর্মী মামলার আসামি, অনেকে জেলে, জেল থেকে জামিনে বের হলেই আবার জেলগেটেই গ্রেপ্তার হচ্ছে। আবার সরকারের নানান অপতৎপরতাও অব্যাহত আছে পাহাড়জুড়ে। এমন নিপীড়নমূলক ভয়ের পরিস্থিতিতে নির্বাচন করার তো প্রশ্নই আসে না।
এবারের নির্বাচন নিয়ে জেএসএস ও ইউপিডিএফের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, তেমন কোনো সমঝোতা বা আলাপ-আলোচনা হয়নি।
তিনি বরং রাঙামাটিতে জেএসএস প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা এবং নির্বাচনের পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
খাগড়াছড়ির বাইরে রাঙামাটির নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, সদর, লংগদুসহ বেশি কিছু এলাকায় ইউপিডিএফের সাংগঠনিক কাজ আছে। অতীতে তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐক্যও দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে অংগ্য মারমা বলেন, “জেএসএসের সঙ্গে ২০১৫ সালে আমাদের একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার কারণে হানাহানি বন্ধ হয়ে পারষ্পরিক সম্পর্ক কিছুটা কাছাকাছি হয়। কিন্তু সম্প্রতি পার্বত্য ইস্যুতে আমরা সরকারকে যে কিছু দাবিনামা দিয়েছি, এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে আবার দূরত্ব বেড়েছে।”
আগে 'শক্তিশালী' হতে চায় জেএসএস-এমএন লারমা
প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছর পর সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস আবার ভাঙনের মুখে পড়ে। সন্তু লারমার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল এমএন লারমার আদর্শের নামে জেএসএস-এমএন লারমা গঠিত হয়। দলটি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমর্থক ও শান্তি চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়নের পক্ষে। বিগত নির্বাচনেও তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটকে সমর্থন করেছে।
দলটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দলটির সহসাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলছিলেন, “আঞ্চলিক দল হিসেবে বিজয়ী হওয়ার মত অবস্থায় আমরা এখনও নেই। সুতরাং বর্তমানে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা মনে করছি, বর্তমান সরকার ও তাদের প্রার্থীকে সহায়তা করা উচিত। ভবিষ্যতে আমরা সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী ও বিজয়ী হওয়ার মত অবস্থায় গেলে অবশ্যই নির্বাচন করব।”
সংগঠনের সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা বলেন, “আমরা প্রতিবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাই হোক। তবে এবার দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
'সুনির্দিষ্ট' অবস্থানে নেই ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক
প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ ভেঙে ২০১৭ সালে সৃষ্টি হয় ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক।
সংগঠনটির বান্দরবান জেলার সভাপতি মংপু মারমা বলেন, “আমাদের দলের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো অবস্থান নেই। তবে নেতাকর্মীরা সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যা নির্দেশনা দেবে আমরা তাই কাজ করব।”
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ইশতেহারে ঘোষণার দাবি তুলে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর সাংগঠনিক সম্পাদক অমর জ্যোতি চাকমা বলেন, “আমরা এমন প্রার্থী চাই যিনি চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবেন।”
কী বলছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি
জেএসএসের একমাত্র প্রার্থী ও নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঊষাতন তালুকদার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে ভোট একতরফা হবে কি না জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুসা মাতুব্বর বলেন, “আগে উনি প্রত্যাহার করুক, তারপর এই বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে।”
অপরদিকে খাগড়াছড়ি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিথিলা রোয়াজা বলেন, “সব প্রার্থী নির্বাচনে থাকলে নির্বাচন জমত। এখানেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর (আওয়ামী লীগ নেতা) মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। যেহেতু বাতিল হয়ে গেছে সেহেতু আর কিছু করার নেই।
তবে নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় এই আসনে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়বে বলে মনে করেন মিথিলা রোয়াজা।
আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নির্বাচনে না আসায় ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে ইউপিডিএফসহ আঞ্চলিক সংগঠন একটা বড় ফ্যাক্টর। এবার তারা নির্বাচনে আসছে না। এতে ভোটার উপস্থিতি কমে যাবে। নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।”