আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার আগেই কেন্দ্র থেকে আসা তথ্যে বড় জয়ের আভাস পেয়ে গিয়েছিলেন তাহসীন বাহার সূচনা।
শনিবার দিনভর ভোট শেষে সন্ধ্যায় কুমিল্লা জিলা স্কুলের ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে এসে সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের মেয়ে বললেন, “আমি ইনশাল্লাহ শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে আমার কাজের মাধ্যমে এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করব।”
ভোটার ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগের মধ্যে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কুমিল্লায় মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে ভোট হয়।
২০২২ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে নৌকা নিয়ে জয় পাওয়া আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুতে শূন্য ঘোষিত মেয়র পদে এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। বর্তমান সরকার আর নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে না আসার ঘোষণায় অটল বিএনপিও আসেনি এই ভোটে।
তবে বাহার কন্যা আর বিএনপির দুই বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ভোটে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগ-বিএনপির পরোক্ষ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয় কুমিল্লা।
তবে শহর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং দুই বছর আগের ভোটে ২৯ হাজারের বেশি মানুষের সমর্থন পাওয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা নিজামউদ্দিন কায়সারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় চতুর্মুখী লড়াই হয় কি না, তা নিয়েও নানা সমীকরণ মেলাতে থাকের শহরবাসী।
শেষ পর্যন্ত বাহার কন্যার গলাতেই উঠে জয়ের মালা। বাস প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৮৯০ ভোট; নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি নিয়ে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮৯৭ ভোট। ফলাফল, ২১ হাজার ৯৯৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী সূচনা।
সাক্কু দুই বছর আগে প্রায় ৫০ হাজার ভোট পেয়ে হেরেছিলেন ৩৪৩ ভোটে। এর আগে ২০১৭ সালে তিনি ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে জয় পান ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে।
২০১২ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ৬৫ হাজার ৭৪০ ভোট পেয়ে তিনি জিতেছিলেন ৩০ হাজারের বেশি ব্যবধানে। সেই হিসাবে রাজনৈতিক জীবনে এবারই সবচেয়ে কম ভোট পেলেন সাক্কু।
দুই বছর আগের নির্বাচনে বিএনপি নেতার পরাজয়ের কারণ ছিলেন নিজামউদ্দিন কায়সার। স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতার ভোট যোগ হলে সাক্কু সেই নির্বাচনেও বড় জয় পেতে পারতেন। কিন্তু উপনির্বাচনে সাক্কু ও কায়সারের সম্মিলিত ভোটও সূচনার প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে কম।
কায়সারের ভোট ২৯ হাজার ৯৯ থেকে কমে হয়েছে ১৩ হাজার ১৫৫। অর্থাৎ তার পুরো ভোটও সাক্কুর বাক্সে পড়লেও ২১ হাজারের ব্যবধান ঘোঁচাতে তা যথেষ্ট ছিল না।
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম হাতি প্রতীকে ৫ হাজার ১৭৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কোন কাজ দিয়ে শুরু করতে চান- এমন প্রশ্নে সূচনা বলেন, “আসলে ১৩ বছর আগে সিটি করপোরেশন হলেও আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অবশ্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে, কারণ সমস্যা অনেকগুলো। দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করতে হবে।”
সাক্কু মেয়র হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় ‘দুর্নীতির শ্বেতপত্র’ প্রকাশ বিষয়ে এক প্রশ্নে বাহার কন্যা বলেন, “আমি যতটুকু জানি, সেই ফাইল দুদকে আছে। তারা সেটা দেখছে। যদি কিছু হয়, সেটা আপনাদের সামনে প্রকাশ হবে। আমি আশা করি, আপনারা সত্যটা প্রকাশ করবেন।”
কুমিল্লার ঐতিহ্যের ধারণ ও লালন করে উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানোর প্রতিশ্রুতিও দেন নবনির্বাচিত মেয়র। তিনি বলেন, “একটা স্মার্ট নগরী তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে, লালন করে সেই উন্নয়নের পথে আমাদের যেতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যকে ভুলে গেলে চলবে না।”
এমবিবিএস ডিগ্রিধারী সূচনা কুমিল্লায় কাজ করা ‘জাগ্রত মানবিকতা’ নামক সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক।
নির্বাচনে প্রথম হলেও কুমিল্লার রাজনীতিতে তার বাবা বাহারের প্রভাব আগে থেকে জানা; মেয়ের ভোটের মাঠে নেমে নির্বাচনের কমিশনের সতর্কতার নোটিসও পেয়েছিলেন তিনি।
কুমিল্লায় তিন প্রার্থী তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া এবং ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন সকাল থেকেই। এর মধ্যে এক কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলিতে দুজন আহত হন।
পাশাপাশি ইভিএমে ভোট দিতে আঙুলের ছাপ না মেলা এবং ধীর গতিতে ভোটগ্রহণের অভিযোগ আসে।
আরও পড়ুন: