“হাসপাতালে ভর্তি করার আগে তার মুখ দিয়ে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছি। ইসমাইলের ভাষ্য, চাঁদার দাবিতে তাকে আটকে রেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতন চালানো হয়েছে,” বলেন প্রভোস্ট।
Published : 03 Apr 2023, 10:04 AM
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চাঁদার দাবিতে’ এক শিক্ষার্থীকে চার ঘণ্টা হলে আটকে রেখে ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি ময়মনসিংহের বলরামপুর গ্রামে।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ূর রহমান হলের একটি কক্ষ থেকে ইসমাইলকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন সহপাঠীরা। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শহীদ মশিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, “ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে সহপাঠীরা হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ভর্তি করার আগে তার মুখ দিয়ে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছি। ইসমাইলের ভাষ্য, চাঁদার দাবিতে তাকে আটকে রেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতন চালানো হয়েছে।”
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সালমান এম রহমান ও সোহেব আলী কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তাদের মধ্যে সোহেব আলী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে পরিচিত তারা।
সহপাঠীরা বলছেন, ইসমাইল যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে একটি ছাত্রবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন সোহেব আলী ও সালমান এম রহমান। রোববার দুপুরে তারা ইসমাইলকে হলে ডেকে নিয়ে যায়। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাকে বেঁধে রেখে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে মারধর করে তারা। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিপিটি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আল জুবায়ের রনি বলেন, “ইসমাইল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। গতকাল দুপুরের পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ওর ফোনও বন্ধ ছিল। ও রোজা ছিল, ইফতারের সময় ওকে না পাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়।
“ওর সহপাঠীরা জানায়, হলের সালমান আর সোহেব ক্লাস চলাকালে ডেকে নিয়ে গেছে, তারপর আর খোঁজ নেই ইসমাইলের। পরে ওর বন্ধুরা হলে গিয়ে খুঁজে দেখে ৫২৮ নম্বর কক্ষে অসচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। প্রথমে ক্যাম্পাসে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়াতে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
শিক্ষার্থীরা জানান, হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষে ৬ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও ছাত্রলীগকর্মী সোহেব আর সালমান দুজনই থাকেন। ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করার দায়ে সোহেব বহিষ্কার হলেও ছাত্রলীগের প্রভাবে হলে থাকেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, “ব্যক্তির দায় কখনও সংগঠন নেবে না। চাঁদাবাজদের ছাত্রলীগ কখনও প্রশ্রয় দেয় না। আর ওরা ছাত্রলীগের পদধারী কেউ নয়।”
ইসমাইলকে উদ্ধারের পর ৫২৮ নম্বর কক্ষটি ‘সিলগালা’ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে হলের প্রভোস্ট আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সালমান এম রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আর সোহেব আলী এর আগেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও গাঁজা সেবনের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছিল।”
বহিষ্কৃত হওয়ার পরও সোহেব কীভাবে হলে থাকছিলেন – এমন প্রশ্নে প্রভোস্ট বলেন, “সোহেব মাঝে মধ্যে থাকত শুনেছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কক্ষটি তালাবন্ধ করে দিয়েছি। বিশৃঙ্খলাকারীদের স্থান এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। আমরা হাসপাতালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর খোঁজ খবর নিয়েছি। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা তা তদন্তে উঠে আসবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”