প্রভোস্ট বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সজীব ও স্বাধীনের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
Published : 07 Feb 2023, 05:51 PM
কথা কাটাকাটির জেরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক সজীবুর রহমান এবং ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান স্বাধীনের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান হলের প্রভোস্ট মিজানুর রহমান খান।
এ ঘটনায় মেহেদী হাসান স্বাধীনের সমর্থক রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন কবির গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি রাতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বিকাল ৪টা থেকে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের তাদের ব্যাচের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য মাঠ প্রস্তুতের জন্য কাজ করছিলেন।
সন্ধ্যার পর খেলার মাঠের গ্যালারির দক্ষিণ পাশের একটি জায়গায় রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইফাত এবং তার বান্ধবী দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সজীবুর রহমানের সমর্থক রাফিউম মিলিনিয়াম ও সাব্বিরসহ তার অন্যান্য সহপাঠীরা ইফাতদের সঙ্গে কথা বলতে যান।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ইফাত তার বন্ধু ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও মেহেদী হাসান স্বাধীনের অনুসারী ফারদিন কবিরকে ফোন করে আসতে বলেন।
পরবর্তী সময়ে ফারদিনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন এসে মিলিনিয়াম ও তার সহপাঠীদের মারধর করেন। পরে তাদেরকে তাড়া করে শাহপরাণ হলে পাঠায়।
পরবর্তীতে সজীবের সমর্থকরা শাহপরাণ হলে গিয়ে মেহেদী হাসান স্বাধীনের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় রুমে ঢুকে ফারদিনকে মারধর করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনের অনুসারী ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ফারদিন কবীর বলেন, “সজীবের সমর্থক কিছু ছেলে আমার দুই বন্ধুকে বিরক্ত করেছে। আমাকে আমার বন্ধু কল দিয়েছিল। পরে আমি একা গিয়ে ছেলেগুলোকে মারধর করে হলে পাঠিয়ে দিয়েছি।“
“এরপর রাতে হলে গিয়ে সজীবের নির্দেশে সাজ্জাদ হোসেন, মিলিনিয়াম, শিমুল, মেহেদী হাসানসহ ১০ থেকে ১৫ জন এসে আমাকে রুমে ঢুকে চাপাতি, রড, পাইপ, দা দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এতে আমার দুই পায়ে, পিঠে, হাতে বুকে আঘাত লেগে ফুলে গেছে। কয়েক জয়গায় ফেটে গেয়ে রক্ত বের হয়েছে।”
ফারদিন কবীর আরও বলেন, “রাতেই আমি ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি। দুপুরের দিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আমি হলে চলে এসেছি।''
সজীবুর রহমানের সমর্থক রাফিউম মিলেনিয়াম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের একটি কর্নারে আমরা সহপাঠীরা মিলে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পিচ তৈরির জন্য কাজ করছিলাম। এমন সময় রসায়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ইফাত নামে একজন মোটরসাইকেল নিয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে আসতে চাইলে আমরা মানা করি।”
“এ সময় তিনি সিনিয়র বলে আমাদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে এটা সমাধান হয়। কিন্তু হঠাৎ করে স্বাধীন গ্রুপের ফারদিন কবিরের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ জন আমাদেরকে মারধর করেন এবং ধাওয়া দিলে আমরা হলে চলে আসি।"
মিলেনিয়াম আরও বলেন, ''এরপর হলে আমাদের গ্রুপের সঙ্গে ওই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।"
এ বিষয়ে শাবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সজীবুর রহমানকে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
মারধরের বিষয় অস্বীকার করে সজীবের সমর্থক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “দুই পক্ষে যখন হলে অবস্থান করে উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হয় আমরা সিনিয়ররা গিয়ে বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করেছি।”
এ বিষয়ে মেহেদী হাসান স্বাধীন বলেন, “আমি ঢাকায় আছি। শুনেছি তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। রাতে সমাধানের জন্য আমি ফারদিনকে পাঠিয়েছিলাম।”
“এর আগেই সজীব ভাইয়ের সমর্থকরা শাহপরাণ হলের ২১৫ নম্বর রুমে গিয়ে ফারদিনকে মারধর করে। বিষয়টি এখনও সমাধান করা হয়নি। উভয় পক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।“
শাহপরাণ হলের প্রভোস্ট মিজানুর রহমান খান বলেন, ''এই ঘটনাটা বাইরে ঘটেছে। হলের যে ঘটনাটা আমরা দেখতেছি। পরিস্থিতি শান্ত আছে। যে আহত হয়েছে তার ব্যাপারে আমাদেরকে কেউ জানায়নি।”
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর মিজানুর রহমান বলেন, “আমি ঘটনাটি ইনফর্মালি শুনেছি।”
একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এ ব্যাপারে জানতে কয়েকবার মোবাইলে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল।