ভোটের লড়াইয়ে আরিফকে না পেয়ে ‘মর্মাহত’ আনোয়ারুজ্জামান

“তাইনের আজকের সিদ্ধান্ত শুনে অবাক হয়েছি।”

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2023, 04:22 PM
Updated : 20 May 2023, 04:22 PM

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ভোটের লড়াইয়ে এলে নির্বাচন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হত বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

শনিবার সব দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে বিএনপি নেতা আরিফুল নির্বাচনে না আসার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় নৌকার কাণ্ডারি সন্ধ্যায় বলেন, “তার (আরিফ) এই সিদ্ধান্তে আমি মর্মাহত। এখনও আরও তিন দিন বাকি আছে, আমি আশা করি, তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন। দলকে বুঝিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে তিনি নির্বাচনে আসবেন।”

প্রায় এক দশক মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে আরিফ অনেক ভাল কাজ করেছেন- এমন প্রশংসা করে আনোয়ারুজ্জমান চৌধুরী বলেন, “সিলেটের মানুষ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করুক এটাই আমি চাই। সিলেটে নির্বাচনের পরিবেশ নাই, উনার এই বক্তব্য আসলে ঠিক না।”

এই সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে বিএনপির না যাওয়ার ঘোষণার মধ্যে নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে জনসভার মধ্য দিয়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলার ঘোষণা দেন মেয়র আরিফ; যা নিয়ে মাসাধিক সময় সিলেট মহানগরীর সাধারণ ভোটার তো বটেই, বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও ‘ধোঁয়াশার’ মধ্যে ছিলেন।

আরিফ ভোট নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে লন্ডনে গেছেন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের পরামর্শ নিতে ঢাকায় গিয়েছেন। পাশাপাশি সিলেটের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। একইসঙ্গে প্রতিটি মহল্লার পঞ্চায়েত প্রধান, মুরুব্বি, সামাজিক সংগঠন, দলের ওয়ার্ড কমিটির নেতা, নিজের শুভানুধ্যায়ীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে নিবিড়ভাবে কথা বলেছেন।

তারপর বিকালে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে দাঁড়িয়ে আরিফ বলেন, “বিএনপি আমার প্রাণের সংগঠন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের রক্তের সঙ্গে আমি বেইমানি করতে চাই না।”

এ সময় দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, নিজের নিরাপত্তা প্রত্যাহার, জনপ্রতিনিধি হয়েও প্রশাসনের একটি পক্ষের কাছে হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ প্রহসনের নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না।”

আরিফের এই ঘোষণা ‘প্রত্যাশামতই’ হয়েছে উল্লেখ করে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। তাই দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাননি। আশা করছি, আরিফুল হক চৌধুরী অতীতের মত দলের আন্দোলন-সংগ্রামে উপস্থিত থাকবেন।“

“আর বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে নেই; তাই প্রশাসন আর দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করবে না।”

Also Read: নির্বাচনে যাচ্ছেন না মেয়র আরিফুল

দলের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরী সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।

‘তাইনে রং করছইন’

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

এর আগেও আরিফ সিলেট পৌরসভায় জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। দলের বাইরেও সিলেটে আরিফের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে এটা সব নেতাকর্মীই মানেন। তিনি আওয়ামী লীগের জামানায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাকে দুবার হারিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেছেন। ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও একটা ধারণা ছিল, আরিফ হয়তো শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থেকে যাবেন।

আরিফের নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় অনেকেই মতই ‘অবাক’ হয়েছেন নগরীর ধোপাদিঘিরপাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হুমায়ুন।

তার ভাষ্য, “আমরা ভাবছিলাম বর্তমান মেয়র নির্বাচন করবেন। কিন্তু তাইনের (তিনি) আজকের সিদ্ধান্ত শুনে অবাক হয়েছি। তবে আমার মনে হয়, ইবার (এবার) ভোটকেন্দ্রে মানুষজন কম যাবে।”

নগরীর বন্দরবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মিয়া প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, “এটা তাইন (তিনি) রং করছইন (করেছেন)। আমরা মানতে (মেনে) পাররাম (পারছি) না। তাইনের (তিনি) দাঁড়ানো উচিত ছিল।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, “আরিফুল প্রার্থী হচ্ছেন  না; তা আমাদের জন্য হাতাশাজনক। কারণ স্থানীয় নির্বাচন আমাদের কাছে একটি উৎসবের মতো; উনি প্রার্থী হলে আমার একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে পেতাম। একই সঙ্গে যিনি মেয়র হবেন তার কাজের জবাবদিহিতাও থাকতো।

“উনার নির্বাচন করার ইচ্ছে ছিল। তবে তিনি দলের সিদ্ধান্ত ও নির্বাচনের আগে কয়েকটি ঘটনার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমার ধারণা। আমি মনে করি, এটা একটি স্থানীয় নির্বাচন, তাই তিনি দল ছাড়াও দাঁড়াতে পারতেন। তবে বিএনপির মত একটি দলের প্রার্থী নির্বাচনে না আসা আমাদের জন্য সুখবর না।”  
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী  বলেন, “দেশে যেভাবে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন হচ্ছে না, এ কারণে ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা কমে আসছে।

“জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে সিটি নির্বাচনে ইভিএম দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে ইভিএম সর্ম্পকে কিছু জানি না। বর্তমান মেয়র নির্বাচন না করাটা উনার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আমার একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে পাব না”, যোগ করেন সুজন সভাপতি।