নির্বাচনে যাচ্ছেন না মেয়র আরিফুল

এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতা আরিফুল দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2023, 10:03 AM
Updated : 20 May 2023, 10:03 AM

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী; যার মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল। 

শনিবার বিকালে নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে এক জনসভায় এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতা আরিফুল দলের সিদ্ধান্তই মেনে নিলেন।

দুইবারের মেয়র বলেন, “বিএনপি আমার প্রাণের সংগঠন। যে সংগঠনকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছি, সেই সংগঠনের ক্ষতি হোক আমি এটা চাই না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের রক্তের সঙ্গে আমি বেইমানি করতে চাই না।”

এ সময় অনেকটা আবেগতাড়িত কণ্ঠে বিএনপি নেতা বলেন, “আমি নির্বাচন করলে আপনারা দলে দলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আমাকে ভোট দিবেন। কিন্তু সেই ভোট অন্ধকারে কার কাছে যাবে সেটা আপনারা সবাই জানেন। আমি আপনাদের এই আমানত অন্ধকারে নিয়ে যেতে চাই না।

“এ প্রহসনের নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না।”

তিনি বলেন, “আমি আপনাদের আরিফ, আমি অন্ধকারে হারিয়ে যাব না। মেয়র থাকলেও কাজ করব, না থাকলেও করব।”

এই সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার ঘোষণার মধ্যে আরিফের নির্বাচন নিয়ে গত বেশ কিছুদিন ধরেই সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল। সাধারণ ভোটার তো বটেই; দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলেন।  

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

২১ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তখন থেকেই দুইবারের মেয়র আরিফের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা চলছিল।

বিষয়টি নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য রোজার সময় আরিফ লন্ডনে যান। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক ও ইফতার পার্টিতে অংশ নেন। দেশে ফিরেও তিনি প্রার্থিতার বিষয়ে খোলাসা করেননি।     

মে মাসের শুরু থেকে সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয় বলে দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ। ফলে তার পর থেকে সিলেট বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নির্বাচনের মাঠে থাকার ব্যাপারে কিছুটা চাপে পড়ে যান আরিফ।

তখন তিনি ঢাকা গিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সিলেটের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন। একইসঙ্গে গত একমাস ধরে সিলেটে দলের নেতাকর্মী শুধু না, প্রতিটি মহল্লার পঞ্চায়েত প্রধান, মুরুব্বি, সামাজিক সংগঠন, দলের ওয়ার্ড কমিটির নেতা, নিজের শুভানুধ্যায়ীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে নিবিড়ভাবে কথা বলেছেন। বিভিন্ন সময় তাকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগও করেছেন।

শনিবার বিকালে পূর্বনির্ধারিত জনসমাবেশে এসেও আরিফ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, “নির্বাচনকে বানচাল করতে এরই মধ্যে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল সম্পন্ন করা হয়েছে। আমি মনোনয়ন কেনার আগেই আমার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা আমার সঙ্গ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যান, ছবি দেখে তাদের গ্রপ্তার করা হচ্ছে। এটা কীসের আলামত?

সিটি নির্বাচনকে 'প্রহসনমূলক' নির্বাচন উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, “সিলেটে যে ভোট ডাকাতি হবে সেটার ইঙ্গিত আপনারা দেখছেন। নির্বাচনের মাত্র এক মাস বাকি কিন্তু এখনও ভোটাররা ইভিএম কী জানে না।

ভোট ডাকাতি করার জন্য সবকটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে মন্তব্য করে আরিফ দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার অনুরোধও রাখেন।

তিনি বলেন, “ইসি সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন চায় না। তারা চায় ভোট ডাকাতি। এজন্য তারা ভোটারদের ইভিএম কী জানাচ্ছে না। ইভিএম নিয়ে জরিপ চালিয়ে দেখেন শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষ ইভিএম চায় না।”

আরিফ আরও বলেন, “এখন আমাকে ফাঁসাতে নানা ষড়যন্ত্র করা হবে। আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, আমি আরিফুল হক চৌধুরী আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীসহ নগরীর বিভিন্ন ওর্য়াডের মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।

তবে জেলা ও মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির কোনো শীর্ষ নেতাকে দেখা যায়নি নাগরিক সভায়।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। ভোট হবে ২১ জুন।