কুষ্টিয়ায় অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, “তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 05:45 PM
Updated : 17 March 2023, 05:45 PM

কুষ্টিয়ায় চিকিৎসকের অনুপস্থিতি ও নার্স-আয়াদের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রসূতির স্বজনদের অভিযোগ।

স্বজনদের অভিযোগ, অদক্ষ নার্স-আয়ারা টেনেহিচড়ে নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টাকালে আঘাতে নবজাতকটি মারা যায়।

বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম।

হাসপাতাল থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের প্রসব ব্যথা নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আসেন সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৩০)। সেখানে চিকিৎসক প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে সবকিছু ঠিকঠাক আছে জানিয়ে প্রসূতিকে গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তির সুপারিশ করেন।

আমিরুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুরে জরুরি বিভাগ থেকে ৬ নম্বর কক্ষে রোগী নিয়ে গিয়ে দেখাতে বলেন। সেখানে নিয়ে গেলে ওই কক্ষে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শারমীন মোস্তারি বিথি চেকআপ করে সবকিছু ঠিক আছে বলে জানান।

প্রসূতির স্বামী আরও বলেন, “ওই ডাক্তার আপা বলেছিলেন, কোনো সমস্যা নেই, নরমাল ডেলিভারিতেই বাচ্চা হবে’। অথচ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আমার বাচ্চাটাকে ওরা মেরে ফেল্ল। আমি এর বিচার চাই।”

প্রসূতির মা সাজেদা বেগম বলেন, “ওয়ার্ডে নেওয়ার পর নার্সরা ডাক্তারের লিখে দেওয়া কাগজ দেখে জানায়, নরমাল ডেলিভারিতেই হবে। আমাদের অপেক্ষা করতে বলে নার্সরা। এ সময়ের মধ্যে নরমাল ডেলিভারির জন্য চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ওষুধ খাওয়ানো হয় প্রসূতিকে।

“কিন্তু দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হলেও ডেলিভারি করাতে পারেনি ওয়ার্ডের নার্সরা। এ সময় সেখানে কোনো চিকিৎসক ছিল না।”

সাজেদা বেগম আরও বলেন, “আমার মেয়ের কষ্ট দেখে নার্স আপাদের বার বার বলেছিলাম, দরকার হলে ডাক্তার আপাকে ডাকুন, না হয় সিজার করে ফেলুন। তখন তারা আমাকে ধমক দিয়ে সেখান থেকে বের করে দেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নার্সরা আমাকে জানায়, আপনার মেয়ের মৃত একটি মেয়ে বাচ্চা হয়েছে।”

এ বিষয়ে কথা বলতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের গাইনী ও অবস বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার সুমাইয়া ইসমাত জাহানের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তার স্বামী ডা. মনিরুজ্জামান কল রিসিভ করেন।

তিনি বলেন, “এখন উনি কোনো কথা বলতে পারবেন না। হাসপাতালের কোনো কথা জানতে চাইলে আগামীকাল হাসপাতালে গিয়ে জেনে নিন।”

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হোসেন ইমামের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কল রিসিভের অনুরোধ জানিয়ে খুদে বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের কথা হয়।

তিনি বলেন, “নার্স-আয়াদের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর সংবাদটি আমি শুনেছি। বিষয়টি আমরাও তদন্ত করে দেখব। তবে রোগীদের পক্ষ থেকে যদি কেউ সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত বা দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ধরনের একাধিক অভিযোগ থাকলেও কোনো ঘটনারই তদন্তসহ বিচার না হওয়ায় লাগাম ধরা যাচ্ছে না বলে অভিন্ন অভিযোগ সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা কারশেদ আলম এবং সচেতন নাগরিক কমিটি- সনাক কুষ্টিয়ার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম টুকুর।