ভিক্ষুকের কোলে রেখে যাওয়া শিশুকে ফিরে পেলেন মা

পাঁচ দিন শিশুটি থেকেছে বেলাল হোসেন ও নিশি আক্তার নামে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। 

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2023, 07:33 PM
Updated : 6 March 2023, 07:33 PM

ভিক্ষুকের কোলে নিজের শিশুপুত্রকে রেখে পালিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পর আদালতের মাধ্যমে আবার ফিরে পেয়েছেন তার মা।

সোমবার বিকালে আদালতের নির্দেশে সুরমা বেগম তার তিন মাসের ছেলে মাহিনকে ফিরে পান।

এই পাঁচ দিন শিশুটি থেকেছে বেলাল হোসেন ও নিশি আক্তার নামে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। 

গত ২ মার্চ আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে লালনপালনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা। তার প্রকৃত অভিভাবকের সন্ধান পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে সেই মায়ের কোলেই শিশুটিকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। 

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জসিম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে এক দম্পতি লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। আবার আদালতের নির্দেশে শিশুটিকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

শিশুটির দাদা হাফিজ উল্যা বলেন, “আমার নাতি এ কয়েকদিন যাদের লালনপালনে ছিল, শিশুটির প্রতি তাদের মায়া জমে গেছে। আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার সময় তারা কান্নাকাটি করেছে। তবে আমরা মাঝেমধ্যে শিশুটিকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যাব।”

গত ১ মার্চ দুপুর ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের আধুনিক হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে তার কোলের শিশুকে সালমা বেগম (৭০) নামে এক ভিক্ষুকের কোলে রেখে যান। এরপর আড়াই-তিন ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ওই নারী আর ফিরে আসেননি। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের জিম্মায় দেয়।  

পরদিন ২ মার্চ সদর থানা পুলিশ আদালতে শিশুটিকে সমাজসেবা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে দিতে আবেদন করে। পরে কাউন্সিলর জসিমের এক আত্মীয় নিঃসন্তান হওয়ায় তারা শিশুটিকে লালনপালনের জন্য আদালতে আবেদন করলে আদালত তাদর দায়িত্ব দেয়।

Also Read: ভিক্ষুকের কোলে শিশু: প্রবাসী স্বামী ‘খরচ না দেওয়ায়’ রেখে যান মা 

Also Read: ভিক্ষুকের কোলে শিশুকে রেখে চলে গেলেন নারী

এদিকে ওইদিন রাতেই শিশুটির মা শিশুকে নিতে থানায় আসেন। আইনি জটিলতা থাকায় তখন আর শিশুটিকে নিতে পারেনি তিনি। 

সোমবার আইনজীবীর মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে আবেদন করেন শিশুটির মা সুরমা বেগম। এ সময় শিশুটিকেও আদালতে নিয়ে আসেন বেলাল-নিশি দম্পতি। আদালত শিশুটিকে মা সুরমা বেগমের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

এ সময় শিশুটির দাদা হাফিজ উল্যা ও তার দুই বোন আদালতে উপস্থিত ছিল। 

সুরমার স্বজনরা জানান, সুরমার শ্বশুর বাড়ি জেলার রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের চরসীতা গ্রামে। তার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়ারবেড়ি এলাকায়। প্রায় ১০ বছর আগে মিরনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। প্রায় ৫ বছর আগে মিরন সৌদি আরবে যান। মাঝেমধ্যে ছুটিতে সে বাড়িতে আসেন। তাদের ঘরে আরও তিন মেয়ে রয়েছে। তাদেরকে নিয়ে সুরমা বেগম জেলা শহরের রেহান উদ্দিন ভূইয়া সড়কের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। 

নিজের কোলের শিশুটিকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে রেখে যাবার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, সৌদি প্রবাসী স্বামী মিরন কয়েক মাস থেকে পরিবারের খরচাপাতি দিতেন না। তাকে প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা ঋণ দিতে হয়। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। ধার-দেনায় বিপর্যস্ত হয়ে স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে তিনি ছেলেকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে বাবার বাড়ি সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের মিয়ারবেড়িতে চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর বাবার বাড়ির লোকজন বকাঝকা করায় তিনি পরদিন ছেলেকে খুঁজতে থাকেন। পরে পরিচিত একজনের মাধ্যমে ছেলের সন্ধান পান।