বুধবার দুপুরে ‘ওয়াশরুমে যাওয়া’র কথা বলে তার শিশুকে এক ভিক্ষুকের কোলে রেখে যান ওই নারী।
Published : 03 Mar 2023, 10:24 AM
প্রবাসী স্বামী সংসারের খরচ না দেওয়ায় ‘জেদ করে’ লক্ষ্মীপুরে ভিক্ষুকের কোলে শিশুকে রেখে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার মা। তিন মাস বয়সী ছেলেকে রেখে অনুশোচনায় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সন্তানকে ফিরে পেতে থানায় হাজির হয়েছেন তিনি।
তবে এখনি তিনি সন্তানকে ফেরত পাচ্ছেন না, কারণ আদালতের মাধ্যমে ওই শিশুকে তার প্রকৃত অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশুটির মাসহ পরিবারের লোকজন সদর থানায় শিশুপুত্রকে ফিরিয়ে নিতে আসে।
পুলিশ সুপার জানান, শিশুটির মায়ের আরও তিনটি মেয়ে আছে। তার সৌদি প্রবাসী স্বামীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়। ওই নারী জেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সন্তানদের নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিন মেয়েকে সেখানের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের আধুনিক হাসপাতালের সামনে ‘ওয়াশরুমে যাওয়া’র কথা বলে তার কোলের শিশুকে সালমা বেগম নামে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের কোলে রেখে যান এক নারী।
কিন্তু এরপর তিনি আর ফিরে না এলে ওই বৃদ্ধা স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি পুলিশকে জানান।
ফুটফুটে শিশুপুত্রকে বৃদ্ধার কাছে রেখে যাওয়ার বিষয়ে ওই নারী বলেন, “চার সন্তান নিয়ে আমি জেলা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা কিস্তি, সন্তানদের খরচ, সংসারের খরচ লাগে। সব মিলিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। মুদি দোকানে অনেক দেনা হয়ে আছি। কিন্তু তাদের বাবা কোনো খরচ দেয় না। তাই তার উপর জেদ করে এ কাজ করেছি।”
তিনি বলেন, “শিশু সন্তানকে ভিক্ষুকের কোলে দিয়ে অন্য সন্তনদেরকে নিয়ে বাপের বাড়ি ভবানীগঞ্জে চলে গিয়েছিলাম। ছেলেকে না নিয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন আমাকে বকাঝকা শুরু করে।
“পরে বুঝতে পেরেছি কাজটি আমি ঠিক করিনি। বুকের ধনকে রেখে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। পরদিন সকাল থেকে তাকে খুঁজতেছি। কোথাও পাইনি।
“পরে বিকালের দিকে পরিচিত একজন ফেইসবুকের মাধ্যমে শিশুটির বিষয়ে জানতে পারে। তার মাধ্যমে থানায় আসি।”
শিশুটির দাদা জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগে তার ছেলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ছয় মাস তারা বাড়িতে ছিল। তার ছেলে সৌদি আরবে থাকে। আর তার পুত্রবধূ নাতি-নাতনিদের নিয়ে জেলা শহরে ভাড়া থাকে।
তার ছেলে সংসারের খরচ পাঠায় দাবি করে তিনি বলেন, তার ছেলে ছয় মাস আগে দেশ থেকে সৌদি ফিরে যান। তার পুত্রবধূ ‘মানসিক সমস্যার কারণে’ নাতিকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে চলে গেছে। এটা কোনো ‘স্বাভাবিক মানুষের কাজ না’।
এদিকে বুধবার বিকালে পুলিশ শিশুটিকে ভিক্ষুকের কোল থেকে উদ্ধারের পর স্থানীয় কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের তত্বাবধানে দেয়। কাউন্সিলর তার আত্মীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির ঘরে লালন-পালনের জন্য রাখেন শিশুটিকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে আদালতে সোপর্দ করে তার দায়দায়িত্ব সমাজসেবা কার্যালয়কে দেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। পরে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই নিঃসন্তান দম্পতি আদালতের কাছে শিশুটিকে লালন-পালনের আবেদন জানালে শর্ত সাপেক্ষে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
একদিনের মধ্যেই শিশুটিকে আপন করে নেওয়া ওই দম্পতি বৃহস্পতিবার রাতে মায়ের খোঁজ পাওয়ার পরই শিশুটিকে নিয়ে থানায় যান। এ সময় তাদের কাঁদতেও দেখা যায়।
শিশুটির মা বার বার ওই দম্পতির পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেন এবং তার সন্তানকে ফিরিয়ে নেওয়ার আকুতি জানান।
জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আদালত থেকে ওই দম্পতিকে লালন-পালনের দায়িত্ব দিলেও শর্ত ছিল শিশুটির পরিবারকে পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এখন তার মা এবং পরিবারের খোঁজ মিলেছে।
“আমরা আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেব। আইনি পক্রিয়ার ভিত্তিতে শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবে তার মা। তবে সে সময় পর্যন্ত শিশুটি ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছে থাকবে।”
আরও পড়ুন