পুঠিয়ার বেলপুকুর চেকপোস্ট এলাকায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে অটোরিকশাটির সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ হলে পাঁচ জন প্রাণ হারান।
Published : 26 Nov 2023, 11:53 AM
বাবার চিকিৎসার জন্য রাজশাহী যাওয়ার পথে এক পরিবারের চারজনকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে নাটোরের চককান্তপুর গ্রাম। তাদের সঙ্গে নিহত হয়েছেন পাশের গ্রামের অটোরিকশা চালক। এত মৃত্যুতে গুরুদাসপুর উপজেলার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে স্বজনের আহাজারিতে।
শনিবার দুপুরে রাজশাহীতে পুঠিয়া উপজেলার সড়কে ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষে পাঁচজনের নিহতের খবর পেয়েই গুরুদাসপুরের চককান্তপুর ও মকিমপুর গ্রামে নিহতদের বাড়িতে ভিড় জমান স্বজন-এলাকাবাসী।
রোববার সকালে দেখা যায় দুর্ঘটনায় একসঙ্গে বাবা, ভাই-বোন ও আদরের মেয়েকে হারানোয় যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন আবু সাইদ।
ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার কেমোথেরাপির জন্য ভাই-বোনের সঙ্গে তার মেয়ে শারমিনকেও রাজশাহী পাঠিয়েছিলেন কিন্তু কেউ তারা আর জীবিত ফিরলেন না বলে- আস্তে আস্তে বলে যাচ্ছিলেন তিনি।
তার ভাই নিহত আইয়ুব আলীর স্ত্রী খালেদার কান্না যেন থামছেই না। দুই ছেলেমেয়েকে বুকে চেপে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন- শ্বশুরের সঙ্গে স্বামীকেও হারিয়ে ছোট দুই সন্তান নিয়ে তিনি অথৈ সাগরে পড়লেন।
নিহতের স্বজনরা জানান, চককান্তপুর গ্রামের ইনসাব আলী (৭৫) ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য তাকে রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সঙ্গে ছিল তার ছেলে আইয়ুব আলী লাবু (৩৫), মেয়ে পারভিন বেগম (৩২), নাতনি রাজশাহীর শাহ মখদুম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শারমিন (১৭)।
পাশের মকিমপুর গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মোখলেসুর রহমানের (৪৫) গাড়িতে তারা রওয়ানা হয়েছিলেন।
পথে দুপুর ৩টার দিকে পুঠিয়ার বেলপুকুর চেকপোস্ট এলাকায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে তাদের অটোরিকশাটির সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ হলে সবাই প্রাণ হারান।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ডেপুটি কমিশনার জামিরুল ইসলাম জানান, “নগরীর খড়খড়ি বাইপাস থেকে একটি ট্রাক নাটোরের দিকে যাচ্ছিলো। আর নাটোর থেকে রাজশাহী আসার সময় যাত্রীবাহী সিএনজিটির সঙ্গে বেলপুকুর চেকপোস্ট মোড়ে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর যানবাহন দুটি খাদে পড়ে যায়।”
পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে চারজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে চাপিলা ইউপির সাবেক সদস্য সিহাব উদ্দিন বলেন, সকালে জানাজা শেষে নিহতদের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে ইনসাব আলী ও তার ছেলে-নাতনিকে চককান্তপুরে এবং মেয়ে পারভিনকে তার শ্বশুর বাড়ি খীদির চাপিলা এলাকায় দাফন করা হয়েছে। আর অটোচালক মোখলেসুর রহমানকে তার গ্রাম মকিমপুরে দাফন করা হয়েছে বলে জানান সাবেক এই জনপ্রতিনিধি।