হাতকড়া পরিয়ে, চোখ বেঁধে যুবলীগ নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসাদুজ্জামান পুলকের শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দাখিল করতে জেলার সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 01:10 PM
Updated : 10 May 2023, 01:10 PM

ঠাকুরগাঁওয়ের এক যুবলীগ নেতাকে থানায় নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে, চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে মারধরের অভিযোগে মামলা হয়েছে সদর থানার ওসিসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক।

মামলায় সদর থানার ওসি মো.কামাল হোসেন, পরিদর্শক (অপারেশন) মো. লতিফ, এসআই খোকা চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ হাফিজ, এএসআই মো. মোতালেবকে আসামি করা হয়েছে।

আসাদুজ্জামান পুলক জানান, মারধরের কারণে তার বাম হাত ভেঙে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো কালো দাগ হয়ে গেছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলাটি আমলে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, “বিচারক এই মামলাটি সদর থানায় এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

“সেই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসাদুজ্জামান পুলকের শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দাখিল করতে জেলার সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া ঘটনাটি জেলার একজন বিচারিক হাকিমকে দিয়ে তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন।”

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৯ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও শহরের সাধারণ পাঠাগার চত্বরে আয়োজিত বৈশাখী মেলা থেকে জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকিকে আটক করে মারপিট করে পুলিশ। এ সংবাদ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক। তিনি সদর থানার ওসি কামাল হোসেনের কাছে রকিকে আটক ও মারপিট করার বিষয়টি জানতে চান। এতে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে পুলককেও আটক করে থানায় নিয়ে যান।

অভিযোগে বলা হয়, এরপর ওসির রুমের ভেতরে পুলকের হাতে হাতকড়া পরানো হয় এবং চোখে গামছা বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান ওসি, পরিদর্শক (অপারেশন) লতিফ, এসআই খোকা চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ হাফিজ এবং এএসআই মো. মোতালেব। এক পর্যায়ে পুলক নিস্তেজ হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লে তাকে লক-আপে ভরে রাখা হয়।

এজাহারে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পরদিন [৩০ এপ্রিল] সকালে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশ ১৫১ ধারায় আসাদুজ্জামান পুলক ও খালিদ সিরাজ রকিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায়। ২ মে তারা জামিনে মুক্ত হন।

নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েন জানিয়ে পুলক বলেন, চিকিৎসার জন্য তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বুধবার সকাল পর্যন্ত তিনি সেখানে চিকিৎসা নেন।

তবে থানায় নিয়ে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সদর থানার ওসি মো.কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, ২৯ এপ্রিল রাত সোয়া ১০টার দিকে বৈশাখী মেলায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগে আসাদুজ্জামান পুলক ও খালিদ সিরাজ রকিকে স্থানীয়রা আটক করে মারধর করে। এতে তারা আহত হন। খবর পেয়ে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। রাতেই কয়েকজন যুবলীগ নেতা তাদের ছাড়িয়ে নিতে এলেও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়নি।

পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয় বলে জানান ওসি।

তিনি বলেন, “যেহেতু রাতেই পুলক ও রকিকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি; তাই তারা এখন মারধর করার অভিযোগ করছেন। এই অভিযোগটি সত্য নয়। তদন্ত হলে সত্য বেরিয়ে আসবে।”

পুলকের আইনজীবী আব্দুর রহিম বলেন, “মধ্যযুগীয় কায়দায় আসাদুজ্জামান পুলকের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের মামলা দায়ের করেছি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।”

ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রকিবুল আলম বলেন, ২ মে থেকে ১০ মে সকাল পর্যন্ত আসাদুজ্জামান পুলক নামে একজন রোগী আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার বাম হাত ভেঙে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো কালো ছোপ দাগ রয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।