সিরাজগঞ্জে মাঠ হাসছে হলুদ ফুলে, চাষিরা ব্যস্ত মধু সংগ্রহে

সুন্দরবনের মৌয়ালরাও এ অঞ্চলে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2023, 05:33 PM
Updated : 2 Jan 2023, 05:33 PM

সিরাজগঞ্জ জেলাজুড়ে ফসলের মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুল। সরিষা চাষের মৌসুমে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে চাষিদের।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মধু চাষিরা আশা করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে এখান থেকে সাড়ে তিনশ’ মেট্রিক টন মধু আহরণ করা সম্ভব হবে।

মধু চাষের বেশি কিছু পদ্ধতির মধ্যে ফুল আসার সময় সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করা একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের অন্যান্য উপজেলার চেয়ে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়ায় সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে।

সরিষা ক্ষেতের চোখ জুড়ানো হলুদ ফুল আকৃষ্ট করছে মৌমাছিদের। তাই এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি সরিষা ক্ষেতের পাশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা চাষিরা বসিয়েছেন শত শত মৌমাছির বাক্স।

একাধিক মধু চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ অঞ্চলে উৎপাদিত মধুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় ভারতের ডাবর থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রাণ, স্কয়ার, এপি, এসিআইসহ বিভিন্ন নামি-দামি কোম্পানির এজেন্টরা মাঠ থেকে অগ্রিম অপরিশোধিত মধু কেনা শুরু করেছে।

সুন্দরবনের মৌয়ালরাও এ অঞ্চলে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন।

উল্লাপাড়া উপজেলার বাঙ্গালা ইউনিয়নের ধরইল গ্রামের মাঠে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ করছেন মৌ-খামারি মানজু ইসলাম।

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় মৌ-বাক্স। যার উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি সাতটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের আসন। এরপর বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়।

সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌ-খামারি আব্দুল কাদের জানান, প্রায় দুই মাস আগে বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সাড়ে সাত শতাধিক প্রশিক্ষিত মৌ-খামারি চলনবিলে অস্থায়ী আবাস গড়েছেন। তারা সরিষা ক্ষেতের পাশে শত শত মৌ বাক্স বসিয়েছেন। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে সরিষা ফুলের মধু আহরণ চলে। এ সময়ে একেকজন মৌচাষি গড়ে দুই থেকে আড়াই টন মধু আহরণ করতে পারেন বলে তিনি জানান।

উল্লাপাড়া উপজেলার বয়রা গ্রামের মধু চাষি আব্দুল মান্নান জানান, উপজেলার ধরইল চরপাড়া এলাকায় সরিষার মাঠে ৩০০ মৌমাছির বাক্স বসিয়েছেন তিনি।

এসব বাক্স থেকে এ বছর এক টন মধু আহরণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

দিনাজপুর থেকে আসা মৌ-খামারি ইয়াসিন শেখ জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও তিনি ১০০টি বাক্স স্থাপন করেছেন। এসব বাক্স থেকে এক সপ্তাহ পর পর মধু আহরণ করা হচ্ছে।

এবার সরিষার গাছে ফুল বেশি আসায় মধু আহরণ ভালো হবে বলে আশা করছেন তিনি।

সিরাজগঞ্জ সদরের মধু চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, মধু সংগ্রহের সময় সহজ শর্তে ঋণ এবং সরকারিভাবে মধু বিক্রির ব্যবস্থা থাকলে তারা আরও লাভবান হতে পারতেন।

সহযোগিতা পেলে উৎপাদিত মধু বিদেশেও রপ্তারি সম্ভব বলে তিনি জানান।

রায়গঞ্জের কৃষক আব্দুল মজিদ এবার এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তিনি জানান, ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসালে পরাগায়নের ফলে সরিষার উৎপাদন বাড়ে। আর ভালো ফলন হলে ছয় থেকে সাত মণ সরিষা পাবেন বলে আশা তার।

একই উপজেলার সরিষা চাষি আবুল কালাম।

তিনি জানান, মৌমাছি পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলন ভালো হয়। তাই এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষা পাওয়ার আশা তার।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চলতি বছর জেলায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

মৌমাছির বাক্স বসিয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণ একটি ক্ষেত থেকে চলতি বছর ৩৫০ মেট্রিক টন মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ১২০ মেট্রিক টন আহরণ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও অন্তত ২০ দিন মধু আহরণ করা সম্ভব হবে।