নির্বাচনে মেয়র পদে আট, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৯ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
Published : 17 Jul 2023, 01:34 PM
সীমানা নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় যাত্রা শুরুর প্রায় ২১ বছর পর কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইভিএমের মাধ্যমে সোমবার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
২০০২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু হওয়া এই পৌরসভার প্রথম নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। তবে ইভিএমের ধীরগতিতে ভোগান্তি পড়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।
সোমবার ভোর থেকেই এ নির্বাচনের ১৪টি কেন্দ্রেই ভোটারদের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হয়েছে তাদের সারি।
প্রথমবারের মতো ইভিএমে নির্বাচন হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে সোমবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফতেহাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৮ নম্বর বুথে দেড় ঘণ্টায় (সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত) ভোট পড়েছে মাত্র দশটি।
বলা যায়- ওই বুথে প্রতি ভোটে সময় লেগেছে প্রায় দশ মিনিট। একই কেন্দ্রের ৩ ও ৪ নম্বর বুথেও এমন দৃশ্য দেখা গেছে। একই পরিস্থিতি ছিলো অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও।
প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি থাকলেও তীব্র গরমে সকলের ভোগান্তি ছিলো চরমে। অনেক ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিতে পারেননি।
ফতেহাবাদ গ্রামের বাসিন্দা লিপি আক্তার বলেন, “সকাল ৬টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। বেলা ১০টা বাজলেও এখনও ভোট দিতে পারিনি। অনেকে ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তীব্র গরমে মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”
সকাল সাড়ে ১০টায় আমেনা বেগম নামে আরেক ভোটার বলেন, “একটি ভোট দিতে দশ মিনিটের বেশি লাগছে। আমি এখনো ভোট দিতে পারিনি। খুবই কষ্ট হচ্ছে গরমে।”
এই কেন্দ্রের ৮ নম্বর বুথের পোলিং অফিসার আঞ্জুম আরা বেগম বলেন, “এখানে ইভিএমে ভোটাররা অনভিজ্ঞ। তাই ভোটে দেরি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ভোট নেওয়ার।”
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আফজাল হোসেন বলেন, “এখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ হাজার ৫২৬। মোট দশটি বুথে চলছে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনের পরিবেশ খুবই ভালো। তবে ভোটগ্রহণে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। কারণ এখানে অনেকেই ইভিএমে ভোট প্রয়োগে অনভিজ্ঞ। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ভোট নেওয়ার।”
এই পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীম বলেন, “ধীরগতির কারণে অনেকে ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এতে ভোট প্রয়োগের হার কমে যাবে। আমরা দ্রুত ভোটগ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচনের পরিবেশে আমি সন্তুষ্ট।”
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নারকেল গাছ প্রতীকের মো. আবুল কাশেম বলেন, “ভোটের পরিবেশ ভালো; কিন্তু ভোট অনেক স্লো। আমি বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। ভোটের আগে মক ভোটিং করা হলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।”
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ৩১ মে দেবিদ্বার পৌর নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে মেয়র পদে আট, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৯ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এখানে ভোটার রয়েছে ৪৪ হাজার ৫০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২২ হাজার ৫৮১ আর নারী ভোটার ২১ হাজার ৯২৮ জন। ভোট কেন্দ্র ১৪ টি।
এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
আওয়ামী লীগের অন্য দুই প্রার্থীর একজন হলেন দেবিদ্বার পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবুল কাশেম ওরফে কাশেম চেয়ারম্যান (নারকেলগাছ)। তিনি বিলুপ্ত হওয়া দেবিদ্বার সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন।
অপরজন হলেন দেবিদ্বার পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ কাইয়ুম ভূঞা (ক্যারম বোর্ড)।
এরই মধ্যে কাশেম ও কাইয়ুমকেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করেছে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ।
এছাড়া মেয়র পদে অপর প্রার্থীরা হলেন- কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কৃত মো. শাহজাহান মোল্লা (ইস্তিরি), স্বতন্ত্র প্রার্থী দৈনিক যুগান্তর-এর কুমিল্লা ব্যুরো রিপোর্টার সাংবাদিক মোহাম্মদ আবুল খায়ের (কম্পিউটার), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও দেবিদ্বারের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এ বি এম আতিকুর রহমান বাশার (মোবাইল ফোন), দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপির সদস্য (বহিষ্কৃত) মো. শরিফুল ইসলাম শামীম (চামচ) এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও আইনজীবী মো. সাইফুল ইসলাম সরকার (জগ)।
বেলা ১২টার দিকে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেবিদ্বারে। শেষ পর্যন্ত কেউ অনিয়ম করতে চাইলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।
তিনি বলেন, “ভোটগ্রহণে ধীরগতি কথা শুনেছি। অনভিজ্ঞতা ও আঙুলের ছাপ মিলতে দেরি হলে এমনটা হতে পারে। তবে ভোটগ্রহণের শেষ সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত যারা কেন্দ্রে আসবেন- তারা যত সময় লাগুক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ”