একদিন বর্ষা এলো গ্রীষ্মের কাছে। বলল, “ভাই গ্রীষ্ম, তোকে তো আজ চলে যেতে হবে।”
Published : 02 May 2024, 02:06 PM
সারাদেশ জুড়ে চলছে গ্রীষ্মের দাপট। তবে গ্রীষ্ম তো আর জানে না যে কয়েকদিন পর তাকে চলে যেতে হবে। গ্রীষ্ম পুরো দেশকে গরম রাখছে আবার নানা ধরনের ফলও দিচ্ছে।
এমনি করে দিন যায়। কয়েকদিন পর বর্ষা গ্রীষ্মের কাছে এলো। বলল, “ভাই গ্রীষ্ম, তোকে তো আজ চলে যেতে হবে। এখন তো দেশে আমার সময়।” গ্রীষ্ম বলল, “আমি কেন যাবো? আমি আছি বলেই না দেশবাসী সুখে আছে।”
বর্ষার উত্তর, “কই সুখ? দেশে এত গরম যে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। কোনো কোনো অঞ্চলে তো খরাও দেখা দিয়েছে। ওইসব অঞ্চলে নদীনালা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জলের অভাবে কোনো ফসলই উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে সেইসব এলাকায় চলছে খাদ্যসংকট। মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তুই কি মানুষের, পশুপাখির কথা ভাবিস না?”
গ্রীষ্ম মৃদু হেসে বলল, “ভাবি বলেই তো পুরোদেশ আম, জাম, কাঁঠাল, তরমুজ দিয়ে ভরে রেখেছি। আমি যেহেতু এত ফল দিই তাই আমার জ্যৈষ্ঠকে বলা হয় ‘মধুমাস’। তুই কি এত ফল দিতে পারিস?”
“ফল নাই দিলাম, কিন্তু আমি তো মানুষজনকে শান্তি দিই। আর বৃষ্টি পড়লে গরম কমে। লোকজন বৃষ্টিতে ভিজে মজা পায়। বর্ষাকালে কদম ফুল ফোটে। বৃষ্টির জলে মাটি উর্বর হয়। সে মাটিতে গাছ ভালো হয়। বৃষ্টি হলে সব গাছের ধুলো ময়লা সাফ হয়ে চারদিক সবুজ দেখায়,” বলে বর্ষা।
“অতিরিক্ত বৃষ্টিও ভালো না। অতিবৃষ্টিতে বন্যা, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মানুষের যাতায়াত, ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়,” হাসতে হাসতে বলল গ্রীষ্ম।
এতক্ষণ এক ডাহুক পাখি দূরে গাছের ডালে বসে ওদের ঝগড়া শুনছিল। এখন সে উড়ে এসে গ্রীষ্ম আর বর্ষাকে বলল, “প্রতিটা ঋতুরই তো কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তা নিয়ে এত ঝগড়া করার মানে কী? আর প্রতিটা ঋতুই দুই মাস পর পর বদলায়। তাই এখন গ্রীষ্মকেও চলে যেতে হবে।”
পাখি উড়ে গেল। গ্রীষ্ম নিরাশ হয়ে বর্ষার দিকে চেয়ে রইল। তারপর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে গ্রীষ্ম বলল, “আবার এক বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা।” মন খারাপ করে গ্রীষ্ম তার বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
এদিকে বর্ষা এলো। ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেল। মেঘের গর্জন শোনা গেল। কয়েক মুহূর্ত পর শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। বর্ষাও এখন জানে দুমাস পর তাকে চলে যেতে হবে। এটা নিয়ে মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। পরিবর্তনই জগতের নিয়ম।