এর আগেও বাদী সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে একই আইনে মামলা করেন।
Published : 19 Sep 2022, 12:02 AM
এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রাঙামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনীন আনোয়ার।
বুধবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির পিবিআইকে আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আশরাফুল হোসাইন আসাদ। মামলা নম্বর- ৩৮৬/২০২২। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৩, ২৫, ২৬, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৫ ও ৩৭ ধারার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক ফজলে এলাহী, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক অনির্বাণ শাহরিয়ার, জাগোনিউজের রাঙামাটি প্রতিনিধি সাইফুল হাসান, দীপ্ত টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বায়েজিদ আহমেদ, টিবিএসের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি দিদারুল আলম ও বণিক বার্তার রাঙামাটি প্রতিনিধি প্রান্ত রনির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি রাখা হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামীমের স্ত্রী নাজনীন আনোয়ার এর আগেও সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে একই আইনে আরেকটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় ফজলে এলাহী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং পরে আদালত তাকে জামিন দেয়।
নতুন মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, আসামিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে মিথ্যা খবর পোস্ট করার কারণে তার এবং তার মা (সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনু) সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ হয়ে মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এর আগে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ডিসি বাংলো পার্কে অবস্থিত ‘পাইরেটস্’ রেস্টুরেন্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে মামলা করেন নাজনীন আনোয়ার। এই মামলায় ৭ জুন সন্ধ্যায় ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তার করে রাঙামাটির কোতোয়ালী থানা পুলিশ। ৮ জুন রাঙামাটির আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান ফজলে এলাহী। এরপর ১৪ জুন চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান তিনি।
এই মামলা করে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
সংগঠনের সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক হেফাজত সবুজ বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকরার এই অপচেষ্টা রুখতে হবে সবাইকে সম্মিলিতভাবে।”
রাঙামাটি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সৈকত বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মিশু দে এক বিবৃতিতে এই মামলাকে ‘হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত’ দাবি করে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বান্দরবান প্রেস ইউনিটের সভাপতি আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি মংসানু মারমা, বান্দরবান সাংবাদিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক আল ফয়সাল বিকাশ পৃথক বিবৃতিতে মামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জিতেন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মোহাম্মদ এক বিবৃতিতে, ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা, অবিলম্বে সাংবাদিক হয়রানির সব পদক্ষেপ বন্ধ করার দাবি জানান।
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে)।
সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সৈকত দেওয়ান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কার্যকর হওয়ার পর থেকে সরকার, সরকারি দল এবং প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনে-অপয়োজনে এই আইনটি যথেচ্ছ অপব্যবহার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সমতলের মতো পাহাড়েও আইনটি ব্যাপক অপব্যবহার স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
“এরই মধ্যে সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে রাঙামাটির একজন সাবেক জনপ্রতিনিধির পরিবারের করা মামলা নিষ্পত্তি না হতেই আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে।”
নেতারা অবিলম্বে সাংবাদিকের নামে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। একই সঙ্গে এই মামলার সত্য-মিথ্যা যাচাই করে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাঙামাটিতে সাংবাদিক ফজলে এলাহী গ্রেপ্তার