রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণে ২০টি ‘আধুনিক’ ঘর

এতে চাষিরা পেঁয়াজ-রসুনের কাঙ্ক্ষিত দাম পাবেন বলে দাবি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের।

শামিম রেজা, ‍রাজবাড়ী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2023, 06:50 AM
Updated : 22 May 2023, 06:50 AM

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য ২০টি আধুনিক ঘর নির্মাণের কথা জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

প্রতিটি ঘরে অন্তত তিনশ মণ পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করা যাবে। সে হিসাবে এই ২০টি ঘরে ৬ হাজার মণের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে। এতে চাষিরা সুবিধা মতো সময়ে পেঁয়াজ-রসুন বিক্রি করে ভালো দাম পাবেন।

সংরক্ষণের সমস্যায় এই জেলায় মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

অল্প সময়ের মধ্যে এসব ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশে পেঁয়াজের ১৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় রাজবাড়ীতে। অনুকূল আবহাওয়া ও ফলন ভালো পাওয়ায় প্রতি বছর বেশি বেশি পেঁয়াজের আবাদ করেন চাষিরা।

এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে রাজবাড়ী ‘দ্বিতীয়’ অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, “সংরক্ষণাগার না থাকায় জেলার কৃষকরা নিজস্ব পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। এতে দেড় থেকে দুই মাস পর থেকে ওই পেঁয়াজে পচন শুরু হয়। তখন কৃষকরা লোকসান এড়াতে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন।

“কৃষকদের কথা মাথায় রেখে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য কালুখালী উপজেলায় ২০টি আধুনিক ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কালুখালী উপজেলায় বিভিন্ন কৃষকের বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ২০টি ঘরে প্রায় ২৪০ মেট্রিকটন (প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মণ ) পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবে কৃষকেরা। 

তিনি বলেন, এই জেলায় মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায় সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন না হওয়ার কারণে। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অধীনে নির্মীয়মাণ ঘরগুলো চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হয়ার কথা রয়েছে বলে আবুল কালাম আজাদ জানান।

কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গরিয়ানা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আকবর সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিজ (পেঁয়াজ) ঘরে তোলার পর আমাদের সংরক্ষণ করে রাখার মতন ব্যবস্থা নাই। পচে যাওয়ার ডরে বাজারে কম দাম পালিও বেচি দিই। মেলা দিন রাখার ঘর থাকলি আমারা সিখানে রেখি সুবিধামতন সময়ে পিজ বেচতি পারতাম।”

আরেক কৃষক রমজান শেখ বলেন, “আমারা যে ট্যাকা খরচ করে পিজ আবাদ করি। সেই দামে বেচতি পারি নে। আমাদের লস যায়। যেই সময় মাঠ থেকে পিজ তুলি তখন বাজারে দাম পাইনে। এক বিঘা জমিতে পিজ আবাদে খরচ হয় গড়ে প্রায় ৪০ হাজার ট্যাকা। আর বেচতি হয় ৩০ হাজারে। ঘরে যে কয় মাস রাখবো তার উপায় নাই। কারণ ঘরে রাখলি এক-দুই মাস পরে পচে যায়, পিজি গাছ জালায়।”

রমজান শেখ আরও বলেন, “শুনতিছি সরকার থেকে পিজ রাখার জন্য ঘর করে দিচ্ছে। ঘর হলিতো আমাদের মতন কৃষকদের সুবিধাই হবি। কারণ পিজ ওই ঘরে রেখে সুবিধামত সময়ে বেচতি পারব।”

পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের কৃষক সবুজ হোসেন বলেন, “পেঁয়াজে এ বছর লোকসান গুনতে হয়েছে। ৮-৯শ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে। অথচ এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১১শ থেকে ১২শ টাকা। শুনেছি, কালুখালীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন‍্য সরকার থেকে ঘর তৈরি হচ্ছে। এতে ওই এলাকার কৃষকেরা উপকৃত হবে। তারা ওই ঘরে তাদের পেঁয়াজ রেখে সুবিধা মত সময়ে বিক্রি করতে পারবে। আমাদের এলাকায় যেহেতু ঘর তৈরি করছে না। সে কারণে আমরা ঘরের সুফল পাবো না। এজন‍্য সরকারের কাছে দাবি, পাংশা উপজেলাতেও যেন এ ধরনের ঘর নির্মাণ করা হয়।”

ওই এলাকার আরেক কৃষক রজব আলী বলেন, “আগামী বছর পিঁয়াজ চাষ করলেও অল্প করবো। কয়েক বছর হলো লস যাচ্ছে পিঁয়াজে। আমার বাড়িতে পিঁয়াজ রাখার মতন ব‍্যবস্থা নাই যে কিছু মজুত করে রাখব। সেদিন শুনলাম, কালুখালীতে পিঁয়াজ রাখার ঘর করে দিচ্ছে সরকার। আমাদের এলাকাতেও তো পিঁয়াজ হয়, তাহলে আমাদের এই দিক হবে না ক‍্যান?”

কালুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পূর্ণিমা হালদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। আমি গত দুদিন আগে বোয়ালিয়া ইউনিয়নে গিয়েছিলাম, সেখানে নির্মাণধীন ঘরের কাজ প্রায় শেষ। শুধু ফ‍্যান আর বিদ্যুৎ সংযোগ বাকি আছে।”

তিনি আরও বলেন, “এসব ঘরে সবাই পেঁয়াজ রাখতে পারবে না। কারণ প্রতিটা ঘরে তিনশ মণ রাখা যাবে। ঘরগুলোর চারপাশ বাঁশ দিয়ে তৈরি, শুধু চালা টিনের। প্রতিটা ঘরে ছয়টা ফ‍্যান থাকবে।”

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কৃষকেরা তাদের পেঁয়াজ যতদিন খুশি ততদিন রাখতে পারবেন। তাদের খরচ শুরু বিদ্যুৎ বিল।”

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মেহেরুন্নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি গত দুদিন হলো যোগদান করেছি। ইউএনও স‍্যার ভারতে আছেন। আমি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন‍্য ঘর নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নেই।”

আরও পড়ুন:

Also Read: ‘পেঁয়াজ আমদানি ছাড়া উপায় নেই’, কৃষি মন্ত্রণালয়কে বাণিজ্যের চিঠি

Also Read: পেঁয়াজের বাজার আরও পর্যবেক্ষণ করতে চান কৃষিমন্ত্রী

Also Read: লোকসানে পেঁয়াজ বেচেছেন কৃষক, ‘মজুতদারিতেই’ দাম তিন গুণ

Also Read: আমদানির ‘হুঁশিয়ারিতেও’ এক মাসে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৮০

Also Read: পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছেই, সরকারের ‘পর্যবেক্ষণ’ শেষ হচ্ছে না