আমদানির ‘হুঁশিয়ারিতেও’ এক মাসে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৮০

কেবল মৌসুম গেল, এরই মধ্যে আলুর কেজি ১৫ থেকে উঠল ৪০ টাকায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 11:25 AM
Updated : 19 May 2023, 11:25 AM

দাম বেড়ে গেলে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ‘হুঁশিয়ারির’ মধ্যে আরও ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দর। এক মাস আগেও রান্নার যে উপকরণের দর ছিল ৩০ টাকা, সেটি এখন রাজধানীর বড় বাজারে ঠেকেছে আশিতে। পাড়া মহল্লার দোকানে আরও বেশি।

একই চিত্র আদার ক্ষেত্রে। এক মাস আগেও আমদানি করা পণ্যটির দাম ছিল কেজিতে ১৫০ থেকে ২৫০, সেটি ঠেকেছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।

কেবল ভরা মৌসুম গেল, এরই মধ্যে আলুর কেজি ১৫ থেকে উঠল ৪০ টাকায়। গত বছর একই সময়ে দাম ছিল ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা।

এভাবে কেন বাড়ছে দাম, তার নেই কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি, যা চাহিদার প্রায় কাছাকাছি। বর্তমানে মজুদও আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন।

গত দুই বছরে উৎপাদন ১০ লাখ টন বাড়ার কারণে কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আমদানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

শুক্রবার রাজধানীর নিউ মার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকায়।

বিক্রেতা জাহিদ হোসেন বলেন, "পাইকাররা বলে মাল নাই। অথচ আড়তে মালের অভাব নাই। কিন্তু দাম বাড়লে তারা আরও বাড়াইয়া বলে। আমাদের আর কী করার আছে? যেমন কিনব, তেমন বিক্রি করব।"

মিরপুরের কাজীপাড়ায় গলির দোকানগুলোতে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মিরপুরের শাহ আলী পাইকারি পেঁয়াজ আড়তের বিক্রেতারা এলসি বন্ধ থাকার কারণে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতার কথা বলছেন।

কারওয়ানবাজারের পাইকারি আদা বিক্রেতা আজিজুর রহমান বাচ্চু জানিয়েছেন, আমদানি বন্ধ থাকায় দাম চড়ছে।

একই দিন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী রংপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, “পেঁয়াজের দাম বেড়েছে; বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে দাম না কমলে আমদানির ব্যবস্থা করা হবে এবং দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অবশ্য গত সপ্তাহেও তিনি দাম না কমলে আমদানির কথা বলেছিলেন। আর এই এক সপ্তাহে দাম বাড়ল কেজিতে ১৫ টাকা।

মানুষের নাভিশ্বাস

তেল, চিনি, সবজি, মাছ মাংসর দাম যখন বাড়তি, তখন নতুন করে কোনো পণ্যের বাড়তি দাম মানুষকে পীড়া দিচ্ছে। সীমিত আয়ের মানুষরা খাদ্যের পেছনে বাড়তি খরচ করতে অন্য খরচ কমাচ্ছে। অনেকের পক্ষে সেই সুযোগও আর থাকছে না।

নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে এদিন বাজার করতে এসেছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের হলে থাকা দুই শিক্ষার্থী।

তাদের একজন রিমা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের তো টাকা সীমিত। আলু আগে ২০ টাকায় নিতাম। এখন ৪০ টাকা কেজি। আগে দুই কেজি নিলে এখন এক কেজি নিচ্ছি। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও তাই। ২৫০ গ্রাম বা আধা কেজি নিতে হচ্ছে। আগে দেখা গেছে চার হাজারে খাওয়ার খরচ চলে যেত এখন ছয় হাজার লেগে যাচ্ছে।”

কোনো কিছুই দাম কমছে না

ঢাকার খুচরা বাজারে এ সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছে কোম্পানি এবং পাইকারদের ‘সিন্ডিকেটে’ বাড়ছে দাম।

নিউ মার্কেট কাঁচাবাজের বিক্রেতা জিহাদুল ইসলাম বলেন, “২২০ টাকা কেজি ব্রয়লার। গতকালও এই দামে বিক্রি করছি। ১৯০ টাকা পাইকারি গেছে। আজ পরিবহনসহ ২০০ টাকা পড়েছে।”

আরেক বিক্রেতা কাজল আহম্মেদ বলেন, “কাপ্তান বাজারে মাল কম আসার কথা বলে দাম বাড়াইয়া রাখে। অভিযান, নিয়ন্ত্রণ যা করার সেখানে করতে হবে। আমরা আর কয়টা বেচি? আমরা তো লসে আছি।”

ডিমের দাম আরও বেড়েছে। বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ১৪০ টাকা। সুপার শপ স্বপ্ন ডিম বিক্রি করছে সাড়ে ১৩ টাকা দরে ডজন ১৬২ টাকায়।

সরকার নির্ধারিত দরে চিনির দেখা নেই। সরকার বলেছে ১২০ টাকার বেশি বিক্রি করলে ব্যবস্থা। কিন্তু দোকানে ১৪০ এর নিচে নেই। ঝামেলা ভেবে অনেক দোকানি চিনি তুলছেন তা।

দাম কমেনি সবজির। মাছ, গরু ও খাসির মাংস, চাল, আটা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। কাঁচামরিচের দাম উঠেছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।