এমন বক্তব্য দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিপ্লব।
Published : 18 Apr 2024, 09:26 PM
একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ঘিরে ‘ভীতিমূলক’ বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফাঁসির দণ্ড থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া লক্ষ্মীপুরে আলোচিত সেই এএইচএম আফতাব উদ্দিন বিপ্লব।
বিপ্লব লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বহুল আলোচিত সাবেক মেয়র আবু তাহেরের বড় ছেলে ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বড় ভাই। একসময় ছাত্রলীগ করা বিপ্লব জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক আহ্বায়ক।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের মাঠে গিয়ে তিনি বলেন, “কেউ ভয় পাবেন না। অল্প পানিতে মাছ তিরতিরায়। ধৈর্য ধরেন। আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবেও না।”
২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলামকে লক্ষ্মীপুর শহরের বাসা থেকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে বিপ্লবসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।
বিপ্লব দীর্ঘদিন পর ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর আবু তাহের তার ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। ওই বছরের ১৪ জুলাই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তার সাজা মওকুফ করেন। পরের বছর আরো দুটি হত্যা মামলায় (কামাল ও মহসিন হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। পরে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে ফিরোজ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলা থেকেও বিপ্লবের নাম প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৪ সালের ১ অগাস্ট কারাগারে থেকে বিয়ে করে দেশব্যাপী ফের আলোচনায় আসেন বিপ্লব। অবশেষে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর তিনি কারামুক্ত হন।
এদিকে, আগামী ২৮ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলু তার (বিপ্লব) খালাতো বোনের স্বামী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় নতুন তেওয়ারীগঞ্জ বাজারে এক গণসংযোগে ভুলুর উপস্থিতিতে ব্ক্তব্য দেন আফতাব উদ্দিন বিপ্লব।
বিপ্লব তার ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও নিজের ফেইজবুক পেইজে শেয়ার করেন।
প্রায় ১১ মিনিটের ভিডিও বক্তব্যের একপর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়, “কেউ ভয় পাবেন না। অল্প পানিতে মাছ তিরতিরায়। ধৈর্য ধরেন। আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবেও না।”
সেখানে তিনি আরও বলেন, “জনগণই বড় শক্তি। ভোটের মাধ্যমে মানুষ জবাব দেবে। আজকের হামলার ঘটনার জন্য একটা কথা বলি। আমি প্রত্যেকদিন এক ঘণ্টা করে এখানে আসবো। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ না হবে, কথা দিচ্ছি, আমি এখান থেকে যাবো না। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবো। আমি দায়িত্ব নিয়েছি, তেওয়ারীগঞ্জ আমি ছাড়ব না।
“ভোটের দিন পর্যন্ত আমি তেওয়ারীগঞ্জে থাকব। আমি দেখব, কে কত বড় সন্ত্রাস হয়েছেন। এটার জবাব ভোটের ব্যালটে দেব, ইনশাআল্লাহ। যে আচরণ করেছেন, তা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেব।”
বিপ্লবের দাবি, দলীয় নেতা ভুলুর নির্বাচনি গণসংযোগে ওই এলাকায় গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন হামলা করায় তিনি রাগে গিয়ে কথাগুলো বলেছেন।
আফতাব উদ্দিন বিপ্লব বলেন, “আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে মঙ্গলবার আমি তেওয়ারীগঞ্জে ভুলু ভাইয়ের নির্বাচনি গণসংযোগে যাই। আমাদের শান্তিপূর্ণ গণসংযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায়। আমার গাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। এজন্য রেগে গিয়ে কথাগুলো বলেছি। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মত কোনো উদ্দেশ্য নেই।”
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলু বলেন, “অটোরিকশার প্রার্থী বোরহান চৌধুরীর লোকজন আমাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। তখন বিপ্লবের গাড়িতেও হামলা করা হয়। এতে বিপ্লব একটু রেগে গিয়ে বক্তব্যে কথাগুলো বলেছেন। হামলার ঘটনায় আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।”
এদিকে, চেয়ারম্যান প্রার্থী ভুলুর উপস্থিতিতে বিপ্লবের দেওয়া বক্তব্যটি ‘উস্কানিমূলক’বলে দাবি করেছেন আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরী।
তার দাবি, বক্তব্যদাতা বিপ্লব ওই এলাকার ভোটার নন। তার এমন ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্যে ভোটের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
বোরহান চৌধুরী বলেন, “বিপ্লব বহিরাগত। তিনি ভুলুর গণসংযোগে এসে উচ্ছৃঙ্খল কথাবার্তা বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য শুনে স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমার কোনো লোক তাদের ওপর হামলা করেনি। হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও শুনিনি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এসব বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেব।”
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক বলেন, “উস্কানি বা ভীতিমূলক বক্তব্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”