বাপা সিলেট শাখার ভাষ্য, এই সেতু ভাঙার অধিকার এলজিইডির নেই; প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরও সেতুটি ভাঙার অনুমোদন দেয়নি।
Published : 23 Jan 2023, 06:01 PM
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার শতাব্দী প্রাচীন সেতু ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা নিয়ে গণশুনানিকে পাতানো খেলা বলছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন – বাপা।
রোববার এ নিয়ে আয়োজিত গণশুনানির আয়োজন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর – এলজিইডি।
শুনানিতে এলাকাবাসী ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের পক্ষে মতামত দিয়েছেন বলে এলজিইডির সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবির জানিয়েছেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর সেতুটি ভাঙার সময় বাপা সিলেট শাখার সদস্যরা সেখানে গিয়ে বাধা দেন। পরে এলজিইডি কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। এরপর এলজিইডি এ নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করে।
প্রকৌশলী ইনামুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১৬৭ জন লোক গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত দিয়েছেন। এলাকাবাসী পানি চলাচলে সমস্যা ও সড়ক দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য দেওয়ানের পুল ভেঙে নতুন ব্রিজ করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
“তবে এলাকাবাসীর কাছে দেওয়ানের পুলের উপরে নতুন ব্রিজ নির্মাণ বা পাশে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে মতামত চাওয়া হলে তখন তারা বলেন, দেওয়ানের পুল থাকলে তাদের পানি সমস্যা ও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে।”
গণশুনানিতে উঠে আসা স্থানীয় এলাকাবাসীর মতামত লিখিত আকারে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানানো হবে; তারপর এলজিইডি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মতামত নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে গত শুক্রবার প্রকৌশলী ইনামুল কবির বলেছিলেন, “সেতুটি ২৫ শতাংশ ভাঙার পর কাজ বন্ধ রাখা হয়। এরপর এলাকার কিছু লোক সেখানে সেতু করার জন্য মানববন্ধন করেছেন। তাই আমরা এখন সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু করব নাকি পাশে আরেকটি সেতু করা হবে – এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য গণশুনানি করা হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জানায়, প্রায় ২০০ বছর আগে সিলেটের তৎকালীন দেওয়ানের (রাজস্ব কর্মকর্তা) নির্দেশে গোলাপগঞ্জের [বর্তমান সিলেটের একটি উপজেলা] ঢাকা দক্ষিণ এলাকার শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়িমুখী সড়ক নির্মাণ করা হয়। এ সময় লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের দেওরভাগা খালে একটি সেতুও নির্মাণ করা হয়। সেতুটিই ‘দেওয়ানের পুল’ নামে পরিচিত।
সেতুটি ভাঙার সময় গত ২৮ ডিসেম্বর বাপা সিলেট শাখার সদস্যরা সেখানে গিয়ে বাধা দেন; পরে এলজিইডি কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেতুটি অক্ষতভাবে সংরক্ষণ এবং ভেঙে ফেলা কিছু অংশ পুনরায় নির্মাণেরও দাবি জানান বাপার সদস্যরা।
এলজিইডির এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেওয়ানের পুল একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি প্রত্নতত্ত্বিক সম্পদ। এই পুল ভাঙার অধিকার তো এলজিইডির নেই। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরও এই পুল ভাঙার অনুমোদন দেয়নি।”
তিনি বলেন, “গণশুনানি তো পুল ভাঙার আগে করার কথা ছিল। এটাও একটা পাতানো খেলা। নিজেদের লোকদের দিয়ে গণশুনানিতে পুল ভাঙার পক্ষে মতামত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পাতানো খেলা বন্ধ করতে হবে। ঐতিহাসিক প্রাচীন স্থাপনাকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।”
তবে আব্দুল করিম কিমের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রকৌশলী ইনামুল কবির।
তিনি বলেন, “এগুলি অসত্য কথা। এ নিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে; নোটিসও দেওয়া হয়েছে।”
গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা যায়, সেতুটি ভারী যানবাহন বহনের ক্ষমতা হারানোর কারণে পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি। পুরোনো সেতুটির দৈর্ঘ্য ছিল ২০ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। একই জায়গায় ৯৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩২ ফুট প্রস্থের নতুন সেতু বানানো হবে। এ জন্য ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সেতুর সংযোগ সড়কটিও প্রশস্ত করার কথা।
আরও পড়ুন: