সিলেটে ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙার পর গণশুনানির আয়োজন

তবে একে ‘পাতানো খেলা’ বলছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2023, 01:37 PM
Updated : 20 Jan 2023, 01:37 PM

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বহু পুরনো ‘দেওয়ানের পুলের’ বেশ কিছু অংশ ভাঙার পর এ নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি।

আগামী রোববার স্থানীয়দের নিয়ে এ গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে বলে এলজিইডির সিলেট জেলা নির্বাহী প্রকৗশলী মো. ইনামুল কবির জানান।  

শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেতুটি ২৫ শতাংশ ভাঙার পর কাজ বন্ধ রাখা হয়। এরপর এলাকার কিছু লোক সেখানে সেতু করার জন্য মানববন্ধন করেছেন। তাই আমরা এখন সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু করব, নাকি পাশে আরেকটি সেতু করা হবে- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য গণশুনানি করা হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে সিলেটের তৎকালীন দেওয়ানের (রাজস্ব কর্মকর্তা) নির্দেশে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ এলাকার শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়িমুখী সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এ সময় লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের দেওরভাগা খালে একটি সেতুও নির্মাণ করা হয়। সেতুটিই ‘দেওয়ানের পুল’ নামে পরিচিত।

সেতুটি ভাঙার সময় গত ২৮ ডিসেম্বর বাপা সিলেট শাখার সদস্যরা গিয়ে সেখানে গিয়ে বাধা দেন; পরে এলজিইডি কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেতুটি অক্ষতভাবে সংরক্ষণ এবং ভেঙে ফেলা কিছু অংশ পুনরায় নির্মাণেরও দাবি জানান বাপার সদস্যরা।

এই অবস্থার মধ্যেই গত ১৫ জানুয়ারি এলজিইডির সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৗশলী মো. ইনামুল কবির স্বাক্ষরিত নোটিশে গণশুনানির কথা জানানো হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, “গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন হেতিমগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ-চন্দরপুর-বিয়ানীবাজার সড়কের ৫৫০ মিটার চেইনেজে এলজিইডি পুরাতন ব্রিজটি (দেওয়ানের পুল) ভেঙে আধুনিক যুগোপযোগী ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি পত্রিকায় ব্রিজটি না ভাঙার অুনরোধ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য মানববন্ধন করেন।”

“বিষয়টি সরকারের গোচারীভূত হলে স্থানীয় লোকজনের মতামত গ্রহণের জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। এই গণশুনানি আগামী রোববার দেওয়ানের পুল সংলগ্ন রাস্তায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা অবধি অনুষ্ঠিত হবে।” 

তবে এলজিইডির এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেন বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেওয়ানের পুল একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। এই পুল ভাঙার অধিকার তো এলজিইডির নাই। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরও এই পুল ভাঙার অনুমোদন দেয়নি।”

গণশুনানি তো পুল ভাঙার আগে করার কথা ছিল জানিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন, “এখন কেন করবে, এটাও একটা পাতানো খেলা, দেখা যাবে নিজেদের লোকদের দিয়ে গণশুনানিতে পুল ভাঙার পক্ষে মতামত নিয়ে আসবে। কিন্তু এই পাতানো খেলা বন্ধ করতে হবে। ঐতিহাসিক, প্রাচীন স্থাপনাকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।”

গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা যায়, সেতুটি ভারী যানবাহন বহনের ক্ষমতা হারানোর কারণে পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি। পুরোনো সেতুটির দৈর্ঘ্য ছিল ২০ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। একই জায়গায় ৯৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩২ ফুট প্রস্থের নতুন সেতু বানানো হবে। এ জন্য ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সেতুর সংযোগ সড়কটিও প্রশস্ত করা হবে।

আরও পড়ুন:

Also Read: সিলেটের ‘দেওয়ানের পুল’ ভাঙা ঠেকাল পরিবেশ আন্দালন