শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে মদপানের একটি ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে সমলোচনার ঝড় ওঠে।
Published : 27 Feb 2024, 06:24 PM
মাদারীপুরের শিবচরের স্কুল থেকে শিক্ষাসফরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মদপানের অভিযোগ ওঠায় দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক মো. ওয়ালিদ মোরশেদ ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষক আল নোমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
সন্ধ্যায় তাদের সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন শিকদার জানান।
স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাসে করে শিক্ষা সফরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে যান ১৬ জন শিক্ষক ও ৪১ জন শিক্ষার্থী। অভিভাবকদের সঙ্গে নেওয়ার কথা থাকলেও পরে নেওয়া হয়নি।
পথে কয়েকটি মদের বোতল থেকে মদপান করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকজন সেটির ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।
পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে মদপানের ভিডিওটি পরে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমলোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনা জানাজানির পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও স্কুলের অভিভাবকরা।
ভিডিওতে শিক্ষা সফরের বাসে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়ালিদ মোরশেদের পাশে একজনের হাতে একটি বিদেশি মদের বোতল দেখা যায়। সেখান থেকে মদ ঢালার চেষ্টা করছেন কয়েকজন। এ সময় মদের বোতল হাতে শিক্ষার্থীরা উল্লাস করতে এবং গানের তালে তালে নাচতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে কথা হয় আঞ্জুমান নামের একজনের সঙ্গে। তার সন্তান শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, "শিক্ষকরাই যদি অবৈধ কাজে জড়িত থাকে, তাহলে ওই স্কুলে কিভাবে আমি আমার সন্তানকে পড়াতে পাঠাই। আমি আর ওই স্কুলে আমার ছেলেকে পাঠাব না।“
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক ওয়ালিদ বলেন, “ভাইরাল হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা মদের বোতলে জুস খাচ্ছিল। ওটা মদ ছিল না।“
প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন শিকদারও একই দাবি করে বলেন, “শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো অসামাজিক কাজ করেনি। তাও সঠিক তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।“
এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এতে শিবচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মাকসুদুর রহমানকে প্রধান করা হয়েছে।
কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপার ভাইজার আসাদুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী।
শিবচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “শিক্ষা সফরে যাওয়ার পথে মদপানের একটি ভিডিও প্রশাসনের হাতে এসেছে। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যদের কমিটিকে মঙ্গলবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“
এ ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে মাদারীপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিব উল্লা খান বলেন, এ ঘটনা শোনার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা মিললে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে।