খামারিরা বলছেন, এক বছরের ব্যবধানে গোখাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে, দুই সপ্তাহ আগে আরেক দফা বেড়েছে দাম।
Published : 15 Jun 2023, 10:33 AM
দেশের যেসব জেলায় সবচেয়ে বেশি গরু পালন হয়, তার মধ্যে অন্যতম পাবনা। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে এ জেলার খামারিরা ছয় লাখের বেশি গরু প্রস্তুত করছেন।
তবে এবার গরু পালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঈদের আগে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। খামারিরা বলছেন, হাটে এখন যে দামে গরু বিক্রি হচ্ছে, তাতে তাদের লোকসান হবে।
অন্যদিকে গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর দাম এবার ‘অনেক বেশি’। লালনপালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঈদের আগে দাম আরো বাড়বে বলে তাদের শঙ্কা।
বেড়া বাজারের গরু ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে যে আকারের গরুর দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ছিল, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। ঈদ ঘনিয়ে এলে দাম আরো বাড়তে পারে।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পশুর হাট পাবনার হাজিরহাট কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, গরুর দাম ‘কিছুটা’ বেড়েছে।
স্থানীয় হাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, গরু তুলনামূলক কম উঠেছে। বিকিকিনিও কম। কোরবানির বাজার এখনো জমে ওঠেনি।
খামারিরা বলছেন, মূলত দুই কারণে হাটে গরু উঠছে কম। প্রথমত, গরু পালনের খরচের তুলনায় দাম পাওয়া যাচ্ছে কম। তাই ঈদে বাড়তি দামে বিক্রির আশায় এখন বেশিরভাগ খামারি গরু ছাড়ছেন না।
অন্যদিকে কোরবানির হাট সামনে রেখে যারা গরু কিনতেন, পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাও আগেভাগে গরু কেনার সাহস করছেন না। সে কারণে এখন হাটে কেনা-বেচা কম।
এক বছরের ব্যবধানে গরু পালনের খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলে খামারিদের ভাষ্য। সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগে দাম আরেক দফা বেড়েছে।
গয়েশপুর গ্রামের খামারি আরিফুল ইসলাম বলেন, এক বছর আগেও গম, খেসারি ও অ্যাংকর ডালের ভুসি ছিল ২৪ থেকে ২৫ টাকা কেজি। এখন তার দাম ৫৫ টাকা। ১৮ টাকা কেজির মসুরের ভুসি ৩৭ টাকা, ২২ টাকা কেজির খৈল ৪৫ টাকা, ২৮ টাকা কেজির চিটাগুড় ৬০ টাকা, ১৮ টাকা কেজির চালের খুদ ৪০ টাকা হয়েছে।
এ ছাড়া ৩৫০ টাকা মণের খড় এখন ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কাঁচা ঘাসের দামও বেড়েছে বলে জানালেন তিনি।
আরিফুল বলেন, “গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গরু পালন এখন আর লাভজনক পর্যায়ে নেই। গরু পালন করতে গিয়ে অনেক খামারিই বড় লোকসানে পড়েছেন।”
বেড়া পৌর এলাকার খামারি মাহফুজা মীনা জানান, তার খামারে ৮০টি গরু ছিল। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসান কমানোর জন্য ২০টি গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এরপরও প্রতি মাসে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
মীনা বলেন, “গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন এসব গরুকে পর্যাপ্ত খাবার খাওয়াতে পারছি না। ভুসি, খৈল কম খাইয়ে খড় বেশি খাওয়াচ্ছি।”
গ্রামে ঘাসের জমি ইজারা নিয়ে সেখানে গরু বেঁধে রেখে সবুজ ঘাস খাওয়াচ্ছেন বলে জানালেন পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চান্দাই গ্রামের খামারি মিলন বিশ্বাস।
তিনি বলেন, “গতবার ৭-৮ হাজার টাকায় এক বিঘা খেসারি ঘাসের জমি মিললেও এবার ১২-১৪ হাজার টাকা লাগছে।”
পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা জানালেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন হোসেন মণ্ডলও।
তিনি বলেন, “গোখাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে অনেকেই গরু পালনে এবার আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। এরপরও ধারণা করছি, ঐতিহ্যগত কারণে হলেও এই এলাকার মানুষ শেষ পর্যন্ত গরু পালন চালিয়ে যাবেন।”
এই কর্মকর্তা জানান, পাবনায় ২৪ হাজারের বেশি নিবন্ধিত খামার রয়েছে। এসব খামারে ৬ লাখের বেশি পশু কোরবানির জন্য তৈরি করা হচ্ছে।
এছাড়া স্থানীয়রা বাড়িতেও প্রচুর পশু লালন-পালন করেন যেগুলো কোরবানির ঈদে হাটে তোলা হয়। তবে এই পরিসংখ্যান সরকারিভাবে নেই।