বাংলা নববর্ষ ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলা বসেছে।
Published : 14 Apr 2023, 06:26 PM
পুরাতনকে ছুড়ে ফেলে নতুনের আহ্বানে দেশের নানা স্থানে বর্ষবরণ উদযাপিত হয়েছে।
১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণের এই উৎসবে শুক্রবার জেলায় জেলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা, সংগীত পরিবেশন, আলোচনা সভা, কুইজ ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণসহ ছিল নানা আয়োজন।
এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাজীপুর
গাজীপুরে দিনটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এতে ঘোড়ার গাড়ি ও পালকি নিয়ে বাদকদল নেচে-গেয়ে অংশ নেন।
পরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়।
বাগেরহাট
বাগেরহাটে শোভাযাত্রায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। জেলা পরিষদ মাঠে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বাগেরহাট জেলা সভাপতি আইনজীবী সীতা রাণী দেবনাথ বলেন, “সব ধর্মের মানুষের আলাদা আলাদা উৎসব থাকে; কিন্তু বাংলা নববর্ষ সব বাঙালির প্রাণের উৎসব।
“বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে দেখতে চাই। সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে এক হয়ে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলব।”
অনুষ্ঠানে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাফিজ আল আসাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল
বরিশালে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র সেরিনয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। চারুকলা বরিশালের আয়োজনে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, উদীচী ও বরিশাল নাটকের সহযোগিতায় এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ।
এর আগে বিএম স্কুল প্রাঙ্গনে উদীচীর আয়োজনে প্রভাতী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া সংগঠনটির আয়োজনে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার শাখার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে সমবেত কণ্ঠে পঞ্চকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন ও অতুল প্রসাদ সেনের গান গেয়ে ও কবিতা আবৃত্তি করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
বঙ্গমাতা চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাহিদ ফেরদৌসীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আবুল কাশেম মো. আনওয়ারুল রউফ, সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ, স্টোর অফিসার দিপক সরকার বক্তব্য দেন।
পরে হাসপাতাল চত্বরে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বঙ্গমাতা চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক নাহিদ ফেরদৌসী।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে মহানগরীতে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। পরে জয়নুল আবেদীন পার্কে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।
উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান ও পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা।
অপরদিকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নগরীর সার্কিট হাউস মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসেছে।
খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়িতে শোভাযাত্রা ও রিআকাজার (জলকেলি) মাধ্যমে উদযাপিত হয়েছে মারমাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব সাংগ্রাইং। মারমাদের নতুন বছর মাহা সাংগ্রাই ১৩৮৫ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় এই বর্ণিল উৎসবের।
শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ‘পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে যাবে সাংগ্রাই মৈত্রীর জলে’ এমন বিশ্বাস থেকে পানি খেলায় মেতে উঠে মারমারা।
উৎসবে অংশ নেওয়া মিনাইকি মারমা ও চিংমেপ্রু মারমা জানান, এই উৎসবে অংশ নিতে সারা বছর অপেক্ষা করেন তারা।
মারমা ভাষার কবি চিংলামং চৌধুরী বলেন, “রিআকাজা বা জলকেলি মারমাদের প্রধান অনুসঙ্গ জলকেলি বা পানি খেলা। আমাদের বিশ্বাস পানি খেলার মাধ্যমে পুরাতন বছরের দুঃখ, গ্লানি, ব্যর্থতা মুছে যাবে।”
সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, “সাংগ্রাই উৎসবে আমরা একত্রিত হয়েছি। এটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমাদের অঙ্গীকার হবে সকলের শান্তিপূর্ণ সহবস্থান।”
শোভাযাত্রা শেষে জলকেলির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ।
উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে স্বাধীনতার বিজয়স্তম্ভ প্রাঙ্গণে জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের বৈশাখের গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ।
পরে আলোচনা সভায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ, পৌর মেয়র মো. কাজিউল ইসলাম, পিপি এসএম আব্রাহাম লিংকন, বীর প্রতীক আব্দুল হাই সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হারুন অর রশীদ লাল, আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদ হাসান লোবান, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান বাবু বক্তব্য দেন।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জে শোভাযাত্রায় অংশ নেন জেলা সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি, চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শামসুল আলম আজাদ, জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, মনি সুপান্থ, চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা৷
এদিকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ‘এসো জ্বালি মনের গহীনে আঁধার বিনাশী আলো’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে৷
রাজবাড়ী
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কুইজ ও চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়।
উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান, পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান।
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালি কৃষি সংস্কৃতির নানা উপকরণ ও মুখোশ আঁকা আল্পনা নিয়ে অংশ নেয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, কমরেড রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, বিজন সেনরায়, জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল, নারী নেত্রী সঞ্চিতা চৌধুরী, এনাম আহমেদ, জাহাঙ্গীর আলম।
সিলেট
নববর্ষকে ঘিরে সিলেটের সুরমা নদীর পাড়ের চাঁদনীঘাটকে নানা রঙ্গের কাগজের ফুল ও লঙ্গর দিয়ে সাজানো হয়েছে। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট জেলার আয়োজনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে ঘাট প্রাঙ্গণ।
বৃহস্পতিবার সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদের পরিচালনায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মন রানা। উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত, প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন, অন্যতম পরিচালক অনুপ কুমার দেব, অর্ধেন্দু কুমার দাশ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আল আজাদ, এনায়েত হাসান মানিক, উত্তম সিংহ রতন, জেলা নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি নিরঞ্জন দে যাদু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল বাসিত শেরো, কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি সুপ্রিয় দেব শান্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এখলাছ আহমেদ তন্ময়, অর্থ সম্পাদক অচিন্ত কুমার দে।