নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিমকে সতর্ক করে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে হাই কোর্ট।
এই ইউএনও এর বিরুদ্ধে গত এপ্রিলে আদালতের এক নোটিস জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকির দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
এ অভিযোগের চিঠি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের অফিস হয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে তিনি বিষয়টি হাই কোর্টে উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠান।
সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেয়। একই ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ইউএনও দপ্তরের অফিস সহকারী উকিল হোসেনকেও দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
আদালতে শুনাতিতে ইউএনও এর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শফিক আহমেদ ও মাহবুব শফিক। অফিস সহকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোজাম্মেল হক।
রাষ্ট্রপক্ষে থাকা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বলেন, আদালতের নোটিস জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচারের হুমকির দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পর ইউএনওসহ দুইজনকে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ‘ছরোয়ার শেখ বনাম সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর’ মধ্যে একটি মামলার সূত্র ধরে। এই মামলা ফরিদপুরের বোয়ালমারী জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন।
এ মামলার নোটিস জারি করতে আদালতের নির্দেশে ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের নেজারত শাখার জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান।
ওই কার্যালয়ের অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে নোটিসটি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু নোটিস গ্রহণ না করে ব্যস্ততার কথা বলে তাদেরকে অপেক্ষায় রাখেন ওই অফিস সহকারী।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর কেউ নোটিস গ্রহণ না করায় জারিকারকরা চলে আসার জন্য উদ্যত হন এবং বিষয়টি আদলতকে জানাবেন বলে জানান।
এরপর নোটিস জারিকারকদের সঙ্গে তর্কাতর্কির পর অফিস সহকারী উকিল হোসেন নোটিসটি বুঝে নেন। অফিসের এক কর্মচারী বিষয়টি ইউএনও মো. রেজাউল করিমকে জানালে তিনি জারিকারকদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে দেন।
অফিস স্টাফদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ইউএনও নোটিস জারিকারকদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়ার হুমকি দেন বলে ওই সময় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
এমনকি ওই সময় ইউএনও জারিকারকদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে বলেন। শেষ পর্যন্ত জোর করে মুচলেকা নিয়ে দুই জারিকারককে ছাড়েন ইউএনও।
প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় হাই কোর্টে ওঠা এ ঘটনার তথ্য থেকে আরও জানা যায়, ইউএনও অফিসে হয়রানির এ ঘটনা জারিকারকদের সমন জারিকারী বিচারক এবং ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজকে লিখিতভাবে জানান। পরে বোয়ালমারীর জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতের বিচারক ইউএনও এর কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি লেখেন ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ।
এরপর ওই চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি হাই কোর্টে উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠান।
এরপর গত ৭ জুন বিষয়টি হাই কোর্টে উঠলে ইউএনও রেজাউল করিম ও অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে তলব করেন হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- সেজন্য কারণ দর্শাতে বলে।
তলবের পর ২১ জুন হাই কোর্টে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন করেন বোয়ালমারী ইউএনও রেজাউল করিম ও তার অফিস সহকারী উকিল হোসেন।
এ বিষয়ে শুনানি শেষে সোমবার আদেশ দিল আদালত।
আরও পড়ুন