টেকনাফের ইউএনওর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা, জানতে চায় হাই কোর্ট

শুনানিতে বিচারক বলেন, “কোনো রং হেডেড পারসন ছাড়া এমনভাবে বলতে পারে না।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2022, 07:18 AM
Updated : 24 July 2022, 07:34 AM

সংবাদ প্রকাশের জেরে কক্সবাজারের স্থানীয় এক সাংবাদিককে 'আপত্তিকর' ভাষায় গালাগালি করার ঘটনায় টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে কী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

এই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন রোববার আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

এ বিষয়ে শুনানির সময় ইউএনওর গালাগালির সম্পর্কে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “কোনো রং হেডেড পারসন ছাড়া এমনভাবে বলতে পারে না।”

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিওতে ইউএনও কায়সারকে একটি অনলাইন পত্রিকার এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে শোনা যায়।

বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এলে শুক্রবার সমাধানের জন্য দুপক্ষকে ডাকা হয়। সেখানে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান ইউএনও।

ওই ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন রোববার উচ্চ আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

ইউএনওর আচরণ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, "উনার ভাষা তো খুবই আপত্তিকর, এটা দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।"

এ সময় অপর বিচারপতি খিজির হায়াত বলেন, "উনি যেভাবে বলেছেন, সেটা কোনো ভাষা হতে পারে না।"

বিচারক বলেন, "সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তারা যদি কোনো অপরাধ করেন, তাহলে আইন আছে, প্রেস কাউন্সিল আছে। কিন্তু এভাবে গালিগালাজ তো কেউ করতে পারেন না।"

Also Read: সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করি: গালি দেওয়া সেই ইউএনও

ইউএনও কায়সার খসরু ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন, সে বিষয়টি উল্লেখ করে বিচারক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিককে বলেন, ইউএনওর বিরুদ্ধে কী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে তা জানাতে হবে।

টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নাফ নদী সংলগ্ন ওয়াব্রাং এলাকায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য কিছু ঘর নির্মাণ করে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি ঘরে জোয়ার-ভাটা ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েন উপকারভোগীরা।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে ঢাকা পোস্ট নামের একটি ওয়েব পোর্টালে 'নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে' শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করেন ওই পত্রিকার কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম ফরহাদ।

এর জেরে সেদিন রাত সাড়ে ১০টায় টেকনাফের ইউএনও তার সরকারি ফোন নম্বর থেকে সাইদুলকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। পরে ওই কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, “একটি নিউজের সূত্র ধরে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ইউএনও খুবই খারাপ ব্যবহার করেন। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের আচরণ আইনগতভাবে ঠিক হয়নি।

“একজন সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হয়। বিষয়টি আমি আদালতের নজরে নিয়ে আসি, আদালত এসব নিউজ পড়লেন। এরপর আদালত বলেছেন- একজন সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।"

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, “ইউএনও দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তারপরও জেলা প্রশাসক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। সেই বিষয়টি ডিসির সাথে আলাপ করে কোর্টকে জানাতে বলেছে।"