রিফাতের গায়ের টি-শার্ট ও গেঞ্জি খুলে তার হাত-পা বেঁধে তাকে নদীতে ফেলে দেয় কাজল ও সোহাগ।
Published : 13 Jun 2023, 12:48 PM
তুরাগ নদী থেকে লাশ উদ্ধার হওয়া এক মোটরসাইকেল চালককে হত্যার অভিযোগে এক নৌকার মাঝিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার বিকালে র্যাব-১-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. পারভেজ রানা জানান, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে অভিযানে চালিয়ে রোববার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার আব্দুর রশিদের ছেলে তাইজুল ইসলাম ওরফে কাজল (৩২) এবং গাজীপুরের গাছা থানার মাইনুদ্দিনের ছেলে ও নৌকার মাঝি এমারত হোসেন (৩৮)।
নিহত মো. শরীফ হোসেন রিফাত (২০) টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেনের ছেলে। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন।
র্যাব কর্মকর্তা পারভেজ রানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়, কাজল ও রিফাতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে একমাস আগে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক দেনা-পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এর জেরে রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন কাজল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ জুন বিকালে কাজল তার সহযোগী সোহাগের সহায়তায় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে রিফাতকে নিয়ে তুরাগ নদী পার হয়ে সাতাইশ কান্দি চরে যান। এ সময় নদীর ঘাটে নিজের মোটরসাইকেল রেখে যান রিফাত।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারদের দেওয়া ঘটনার বর্ণনার বরাতে বিজ্ঞপিতে র্যাব জানায়, সাতাইশ কান্দি চরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আগের লেনদেনের বিষয় নিয়ে আবার কাজল ও রিফাতের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে কাজল ও সোহাগ দুইজন কিল-ঘুষি মেরে রিফাতকে নদীর পাড়ে ফেলে দেয় এবং রশি দিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলে।
এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী খেয়া ঘাটের অপর পাড়ে থাকা মাঝি এমারত হোসেনকে এপারে ডেকে আনে। পরে রিফাতকে নৌকায় উঠিয়ে মাঝ নদীতে নিয়ে যায় তারা। সেখানে রিফাতের গায়ের টি-শার্ট ও গেঞ্জি খুলে তার হাত-পা বেঁধে তাকে নদীতে ফেলে দেয় কাজল ও সোহাগ।
পানিতে ডুবে রিফাতের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে তারা দ্রুত ঘাটে চলে যায়। সেখান থেকে বাড়িতে ফেরার পর গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপন করে।
পরদিন ৬ জুন বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন রোদ্রপুর এলাকায় তুরাগ নদীতে ভাসমান একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে রিফাতের বাবা মো. ফারুক লাশটি তার ছেলের বলে সনাক্ত করেন।
পরদিন তিনি বাদী হয়ে গাজীপুরের গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-১ এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাত ৮টার দিকে র্যাব-১, গাজীপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাজলকে গ্রেপ্তার করে এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
পরে তার দেওয়া তথ্য রাত ৯টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন পলাশোনা খেয়াঘাট এলাকা থেকে নৌকার মাঝি এমারত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তীতে র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রিফাতকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং এই হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয়।
কাজলের বিরুদ্ধে গাজীপুর কোর্টে ও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন ও তদন্তাধীন আছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে র্যাব।