সাকিবের আইনজীবী সাজেদুর রহমান সংগ্রাম বলেন, “ভবিষ্যতে আমরা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকব। আইন মেনে চলব।”
Published : 01 Dec 2023, 05:59 PM
আদালতে হাজির হয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগের লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিয়েছেন মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
নির্বাচনের আচরণ বিধি না মেনে প্রচার শুরুর নির্দিষ্ট তারিখের আগেই জনসংযোগ ও শোভাযাত্রা করায় তাকে তলব করে ব্যাখ্যা চায় নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
তারই ব্যাখ্যা দিতে শুক্রবার বেলা ৩টায় মাগুরা দায়রা ও জজ আদালতে সশরীরে হাজির হন সাকিব।
এরপর ৩টা ৪৫ মিনিটে কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সত্যব্রত শিকদারের আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেন তিনি। এ সময় সাকিবের আইনজীবী সাজেদুর রহমান সংগ্রাম তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত থেকে বেরিয়ে সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, “২৯ তারিখে আমি মাগুরায় আসলে আমার ভক্তসহ শহরবাসী আমাকে শুভেচ্ছা জানান। এটা একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এ ঘটনার জন্য আমি খুবই দুঃখিত।
“আমি নির্বাচনি আইনের প্রতি যথেষ্ঠ শ্রদ্ধাশীল। তবে নির্বাচনে এই প্রথম ও নতুন। আগামীতে যেন এরকম ঘটনা না ঘটে সেদিকে আমি দৃষ্টি রাখব।”
সাকিবের আইনজীবী সাজেদুর রহমান সংগ্রাম বলেন, “২৯ নভেম্বর সাকিব আল হাসান মাগুরায় আসেন। তখন কামারখালী এলাকায় তার ভক্ত ও উৎসুক জনতা সেখানে জড়ো হয়। তারা সাকিবকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। সেখানে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। কিংবা দলীয় কাউকে তিনি ডাকেন নাই।
“আমরা নোটিসের জবাবে এসব কথা উল্লেখ করেছি। ভবিষ্যতে আমরা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকব। আইন মেনে চলব।”
নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার পর বুধবার প্রথমবার নিজের এলাকা মাগুরায় যান সাকিব। সেই খবরে সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল সেখানে।
বেলা আড়াইটার দিকে শ্রীপুরের ওয়াপদা গড়াই সেতু পার হয়ে মাগুরায় প্রবেশ করেন সাকিব। সে সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী ও ক্রিকেট অনুরাগী মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সাকিবকে অভ্যর্থনা জানায়।
এরপর মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভায় যোগ দেন সাকিব। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে দেখা যায় সাকিবকে।
সাকিবকে পাঠানো নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চিঠিতে বলা হয়, “সাকিব আল হাসান, মাগুরা-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর গত ২৯ নভেম্বর, বুধবার ঢাকা থেকে মাগুরায় আগমনের সময় পথে কামারখালী এলাকা থেকে শোডাউন করে গাড়িবহর নিয়ে মাগুরা শহরে প্রবেশ করেন এবং নাগরিক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
“এতে জনগণের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন, যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, ইলেকট্রিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর দ্বারা আপনি সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৬ (ঘ), ৮ (ক), ১০ (ক) এবং ১২ ধারার বিধান লংঘন করেছেন।
"এ আইন ভঙ্গের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, কমিটির দপ্তরে আগামী ১ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪ টায় সময় স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।"
আচরণবিধি ভঙ্গ: সাকিবকে ডেকেছে অনুসন্ধান কমিটি
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ঢাকা-১০, মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন সাকিব। পরে মাগুরা-১ আসন থেকে সাকিবকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর আগে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস ছিলেন।
এবারের নির্বাচনে অনিয়ম রোধে প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য ‘ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি’ গঠন করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী অপরাধ, আচরণবিধি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিতে অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়াদির অনুসন্ধান করে নির্বাচন কমিশনকে জানাবে এই কমিটি।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার জরিমানা বা
উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। নির্বাচনী অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছর দণ্ডের বিধান রয়েছে।