আচরণবিধি ভঙ্গ: সাকিবকে ডেকেছে অনুসন্ধান কমিটি

সাকিবকে শুক্রবার বিকেল ৪টায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

নির্বাচনের আচরণ বিধি না মেনে প্রচার শুরুর নির্দিষ্ট তারিখের আগেই জনসংযোগ, শোভাযাত্রা করায় মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ব্যাখ্যা চেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।

সাকিবকে শুক্রবার বিকেল ৪টায় মাগুরায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

মাগুরা-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত, মাগুরা) সত্যব্রত শিকদার বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি সাকিবের কাছে পৌঁছে গেছে।“

নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার পর বুধবার প্রথমবার নিজের এলাকা মাগুরায় যান সাকিব। সেই খবরে সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল সেখানে।

বেলা আড়াইটার দিকে শ্রীপুরের ওয়াপদা গড়াই সেতু পার হয়ে মাগুরায় প্রবেশ করেন সাকিব। সে সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী ও ক্রিকেট অনুরাগী মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সাকিবকে অভ্যর্থনা জানায়।

এরপর মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভায় যোগ দেন সাকিব। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে দেখা যায় সাকিবকে।

সাকিবকে পাঠানো নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চিঠিতে বলা হয়, “সাকিব আল হাসান, মাগুরা-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর গত ২৯ নভেম্বর, বুধবার ঢাকা থেকে মাগুরায় আগমনের সময় পথে কামারখালী এলাকা থেকে শোডাউন করে গাড়িবহর নিয়ে মাগুরা শহরে প্রবেশ করেন এবং নাগরিক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

“এতে জনগণের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন, যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, ইলেকট্রিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর দ্বারা আপনি সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৬ (ঘ), ৮ (ক), ১০ (ক) এবং ১২ ধারার বিধান লংঘন করেছেন।

রাজনীতিতে একদম ক্লাস ওয়ানের ছাত্র: সাকিব

সাকিবকে সহযোগিতার আশ্বাস, কেউ কেউ মানতে পারছেন না

এবার সব আসনেই ইসির ‘অনুসন্ধান কমিটি’

"এ আইন ভঙ্গের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, কমিটির দপ্তরে আগামী ১ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪ টায় সময় স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।"

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ঢাকা-১০, মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন সাকিব। পরে মাগুরা-১ আসন থেকে সাকিবকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর আগে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস ছিলেন।

আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, তাতে বলা হয়েছে প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে, যা চলবে ভোটের দুদিন আগে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।

এবারের নির্বাচনে অনিয়ম রোধে প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য ‘ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি’ গঠন করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী অপরাধ, আচরণবিধি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিতে অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়াদির অনুসন্ধান করে নির্বাচন কমিশনকে জানাবে এই কমিটি।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। নির্বাচনী অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছর দণ্ডের বিধান রয়েছে।

মাগুরায় নাগরিক সংবর্ধনায় সাকিব বলেন, “আমি ক্রিকেটার হলেও রাজনীতিতে একদম নতুন, ক্লাস ওয়ানের ছাত্র। এজন্য নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সহযোগিতা কামনা করছি।”

নির্বাচিত হলে আগামী দিনে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাকিব। এজন্য নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সাভা শেষে সাকিব মাগুরা পৌর কবরস্থানে দাদি রেবেকা বেগম ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাদের কবর জিয়ারত করেন। সেখান থেকে তিনি মাগুরা স্টেডিয়ামে বন্ধুমহল ও মাগুরাবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরে তার জন্মস্থান মাগুরা শহরের কেশব মোড়ের বাড়িতেও যান।

সাকিবের আগমন ঘিরে তার বাড়িতে আগে থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। সাকিব উপস্থিত নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

নির্বাচনী এলাকায় সাকিবের এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে পরিগণিত হবেন। কিন্তু যিনি এখনও প্রার্থী নন, তার বিষয়ে আচরণবিধি প্রতিপালন তো প্রযোজ্য হবে না।“

এদিকে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ঢাকা-১৯ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মো. এনামুর রহমানেরও ব্যাখ্যা চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি।

বিচারিক হাকিম জাকির হোসেন বলেন, "প্রার্থীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।"

এছাড়া বিধি ভঙ্গের কারণে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীকে চিঠি পাঠিয়েছেন বিচারিক হাকিম শেখ আনিসুজ্জামান। ১ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কমিটির কাছে উপস্থিত হয়ে দস্তগীর গাজীকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।