গাজীপুরে হামলার নিন্দা, ভোটের মাঠে নিরাপত্তা চান জায়েদা

জায়েদা খাতুনের প্রচারে হামলার জন্য আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লার লোকজনকে দায়ী করা হচ্ছে; তবে আজমত উল্লা খান অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 12:45 PM
Updated : 19 May 2023, 12:45 PM

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী জায়েদা খাতুন তার প্রচারে হামলার নিন্দা করে জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।

শুক্রবার দুপুরে নগরীর ছয়দানা (মালেকের বাড়ী) এলাকায় নিজ বাসভবনে জায়েদা খাতুন ও ছেলে তার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সম্মেলন করেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীর গোপালপুরে নির্বাচনী প্রচারের সময় জায়েদা খাতুনের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে।

এ হামলার জন্য জায়েদা ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খানের লোকজনকে দায়ী করছেন। তবে আজমত উল্লা খান অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে জায়েদা খাতুন বলেন, “আমার নিজের ভোট নিজেই চাইয়া নিতে অইবো জনগণের কাছ থেইকা। আমার ভোট আমরা মা-ছেলেরা ভোট চাওয়ার জন্য বের হই। যে কয়দিনই বের হয়েছি টঙ্গীতে এ কয়দিনই হামলা। বৃহস্পতিবার গাড়ির সামনে যে হামলা করল আমরা মা-ছেলের উপর, আমগো তো জীবন বাঁচানোর জন্য করে নাই। 

“আমি যদি ভোটই না চাইতে পারি, ভোট দেয়ার জন্য লোকজনের কাছে না কইতে পারি, তাইলে ভোট কেমনে কালেকশন করব। ওরা ভোটের জন্য আমাকে আমার ছেলেরে মারার জন্য প্রস্তুতি নিয়া আইছে।” 

জায়েদা আরও বলেন, “আজমত উল্লা খান যেই লোক সেট করছে আমরা তো এগুলো ভাবতে পারি না। তারা যে বেরুলেই আমার উপর হামলা দিব। আমার মার্কা হইছে টেবিল ঘড়ি। আমার মার্কার মাইদ্দে ভোট চাই, আমার ভোটের নিরাপত্তা চাই। 

“আমি একটা মেয়ে মানুষ। আমি ভোট চাইতে গেলে লোক দিয়া মারার চেষ্টা কেন? মারতে চায় কেন? আমার দাবি আমি এবং আমার জনগণ যেন নিরাপত্তা পায়, ভোট দিতে পারে।” 

সংবাদ সম্মেলনে জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনার এবং সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষ ভোট করা। এলাকাভিত্তিক আমাদের যারা দায়িত্ব পালন করছেন, প্রশাসনের কিছু লোক তাদের বাসায় গিয়ে মোবাইলে এবং কৌশলে উঠিয়ে নিয়ে থ্রেট করছে, ভয় দেখাচ্ছে এবং অনেকের কাছ থেকে টাকাও নিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে কোনোভাবেই জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে যেন তারা ভোটটা না দেয়। তারা আজমত উল্লা খানকে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে।” 

তিনি নির্বাচনী পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমার মা জায়েদা খাতুন। আমি তার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছি। আমি যখন কোনো প্রচারনায় যাই তখন প্রত্যেক ওয়ার্ড, মহল্লায় কর্মী ও সমর্থককে বিভিন্নভাবে তারা কৌশলে বাধা দিচ্ছেন। আজমত উল্লা তার নিজস্ব ও দলীয় লোক দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি করছে।” 

জাহাঙ্গীর আলাম বিভিন্ন জায়গা থেকে রাতে তার মায়ের পোস্টার, লিফলেট অপসারণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন। তাই তিনি ভোটের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। 

ভোটের পরিবেশ নিরপেক্ষ রাখার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

জাহাঙ্গীর বলেন, “গত চারদিন টঙ্গীতে আমরা যেসব এলাকায় গিয়েছি সেসব এলাকায় আজমত উল্লার নিজস্ব লোক দিয়ে আমাকে এবং আমার মা জায়েদা খাতুনকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা কৌশলে বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আমার উপরে এবং আমার মাকে তারা আক্রমণ করেছে। আল্লাহ এবং জনগণ আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে।” 

ভোটের নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নির্বাচন কমিশন সরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর বলেন, “আমার মা একজন মেয়ে মানুষ এবং একজন নারী। একজন নারীর ভোট যদি ছিনতাই করে নেওয়া হয়, একজন নারীকে যদি প্রচারনায় বাধা দেওয়া হয় তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু একজন নারী তাই নারী হিসেবে উনার কাছে ন্যায় বিচার চাই। এখানে যেন সুষ্ঠু ভোটটা হয়।” 

সামনে জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, “আমি মনে করি সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার–তারা চেষ্টা করছে একটি স্বচ্ছ ভোট করার জন্য। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে আপনাদের কর্মকর্তারা আপনাদের ভোটের পরিবেশ নষ্ট করে এটা ভবিষ্যতে সবার জন্য ক্ষতিকর হবে।” 

জাহাঙ্গীরকে দুদক থেকে চিঠি দিয়েছে দুদক কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য। 

এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি যদি ২১ ও ২২ তারিখ দুদক কার্যালয়ে গিয়ে বসে থাকি–এটা কি আমার নির্বাচন করার জন্য দিয়েছেন? না আমার মার নির্বাচনে ক্ষতি করার জন্য দিয়েছেন?” 

জায়েদার নির্বাচনী প্রচারে হামলায় অভিযোগ অস্বীকার করে আজমত উল্লা খান বলেন, তার কোনো কর্মী-সমর্থক এ হামলা চালায়নি। এটা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ।

টঙ্গীতে জায়েদার গাড়ি ভাংচুর, মামলা দায়ের