লালমনিরহাট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে বলেছেন তার ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।
মঙ্গলবার বিকালে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ মিলনায়তনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল হকের নির্বাচনি প্রচার সভায় এ বক্তব্য দেন তিনি।
মাহবুবুজ্জামান আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পাশাপাশি কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। ভাইয়ের বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ায় এলাকায় তুমুল আলোচনা চলছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ছোট ভাই সভাস্থলে মঞ্চে উঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হককে দেখিয়ে, তার ঈগল প্রতীকে ভোট দিতে এবং তার কর্মী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।
মাহবুবুজ্জামান এ সময় তার ভাই মন্ত্রী নুরুজ্জামাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গত মাসে দুইটা রিকশা দিয়েছেন। যার একটা দিয়েছেন আপনার বাড়ির পাহারাদার জমিরকে আর একটি দিয়েছেন আপনার ছেলের বাবুর্চি ইদ্রীসকে। আর গরিব লোক ছিল না?
“গরিব মানুষের বাড়ি পোড়া গেলে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে টিন দেওয়া হয়। সেই টিন পায় আমার আপনার জ্যাঠাতো ভাই নজরুল মাস্টার আর কেচু মাস্টার। এরা গরিব অসহায়?”
কালীগঞ্জের রুদ্বেশ্বরে দক্ষতা উন্নয়নের অফিস করার জন্য নুরুজ্জামান গরীবদের ‘ঠকিয়েছেন’ বলেও সভায় অভিযোগ করেছেন মাহবুবুজ্জামান।
তিনি বলেন, “অফিসের জন্য উনি ৪-৫ লাখ টাকায় গরিব কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনলেন। সেই জমি রেজিস্ট্রি হলো ওনার ভাতিজা, ফুপাত ভাই হেলাল, মোস্তফা ফারুকদের নামে। কিনলো পাঁচ লাখে, আর লিখে নিলো ৩০ লাখে। সবাই মিলে ৩০ লাখ টাকা করে ভাগ করে নিলেন। সরকারের টাকা গরিব কৃষকরা পেলে দুঃখ ছিল না। এ ছাড়া ভোটমারী থেকে মহিষখোচা পর্যন্ত তিস্তা নদীতে বাঁধ দেওয়ার অশ্বাস দিয়েও মন্ত্রী তা করেননি।”
মানুষের সঙ্গে প্রতারণা না করতেও মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মাহাবুবুজ্জামান। বলেন, “গোপন ফাঁস করে দেই। আপনি নৌকা নিয়েছেন না? নৌকায় ভিড়তে পারবেন না। কারণ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আপনি নৌকা পুড়িয়েছেন। নৌকা আপনাকে মান করবে না।”
সভায় আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস, উপজেলার ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত রায় বিদুর, কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি ও সারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নিজের ভাইয়ের বিপক্ষে গিয়ে কেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়োন্টফোর ডটকমকে মাহাবুবুজ্জামান বলেন, “আমি গতকালকে যে বক্তব্য দিয়েছি সেটাই আমার কথা, নতুন করে আর বলার কিছু নাই। আরও বক্তব্য রাখব, শুনতে পারবেন।”
তবে আপন ভাই নুরুজ্জামানের সঙ্গে এই বৈরিতা ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তাদের ভাষ্য, ২৮ নভেম্বর নির্বাচনে কালিগঞ্জ উপজেলার তুজভাণ্ডার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহাবুবুজ্জামানের স্ত্রী। সেসময় নুরুজ্জামান এর বিরোধিতা করলে মাহাবুবুজ্জামনের স্ত্রী স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূর ইসলামের কাছে হেরে যান তিনি। আর নূরকে জয়ী করতে নুরুজ্জামানের সর্বাত্নক চেষ্টা ছিল। মূলত দ্বন্দ্বটা সেখান থেকেই শুরু।
এসব বিষয়ে কথা বলতে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে বুধবার বিকালে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।