অবরোধের দিন এবং এর আগের দিন বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে প্রায় ৭০ লাখ টাকার ব্যবধান ছিল।
Published : 08 Nov 2023, 08:31 AM
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধে মহাসড়কে গাড়ি কম চলেছে; আর এ কারণে দেশের অন্যতম তিন সেতুতে টোল আদায় কমে গেছে।
তবে অবরোধের মধ্যেও হাজারো স্বল্প ও দূরপাল্লার গাড়ি চলেছে। এরমধ্যে যাত্রীবাহী গাড়ি যেমন চলেছে; তেমনি পণ্যবাহী পরিবহনও চলেছে এই তিন সেতু দিয়ে।
যদিও হরতাল-অবরোধের মধ্যে গাড়ি না চালানোর কারণ হিসেবে মালিকরা নিরাপত্তা আর যাত্রী স্বল্পতার কথা বলছেন।
মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। এর আগের দিন ২৮ অক্টোবর ছিল রাজধানীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশ। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মূলত এদিন থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হরতালের আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মূলত এ আতঙ্ক থেকে রাজধানী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগের পদ্মা সেতু, ঢাকা-উত্তরবঙ্গের পথের বঙ্গবন্ধু সেতু এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুতে যানবাহন পারাপার কমে যায়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত নয় দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে ১ লাখ ২৭ হাজার ১০৫টি যান পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ অক্টোবর পদ্মা সেতুতে ১৬ হাজার ৭০৭টি যানবাহন চলাচল করে। এতে মোট টোল আদায় হয় ২ কোটি ১১ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা। ২৬ অক্টোবর ২ কোটি ৩১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫০ টাকা এবং ২৭ অক্টোবর ২ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা টোল আদায় হয়।
কিন্তু ২৮ অক্টোবর থেকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল কমতে থাকে। এদিন ১১ হাজার ৪০২টি যানবাহন চলে। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৪২ হাজার ৫০ টাকা।
হরতালের দিন ২৯ অক্টোবর পদ্মা সেতুতে গাড়ি আরও কমে যায়। এদিন চলে ১০ হাজার ৩৫৬টি গাড়ি। আর টোল আদায় হয় ১ কোটি ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
৩০ অক্টোবর কোনো হরতাল বা অবরোধ ছিল না। সেদিন পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল আবার বেড়ে যায়। ১৮ হাজার ৮১৯টি যানবাহন থেকে মোট টোল আদায় হয় ২ কোটি ৪৬ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ টাকা।
হরতালের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে ৩১ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ৭২ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়; যা ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলে।
পরিসংখ্যান বলছে, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিনে পদ্মা সেতু দিয়ে মোট ৩২ হাজার ৫৫৪টি গাড়ি চলাচল করে। আর টোল আদায় হয় তিন কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন আদায় হয়েছে এক কোটি ৩২ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৩ টাকা।
কিন্তু ৩ নভেম্বর ছিল শুক্রবার; ছুটির দিনে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। ফলে এদিন পদ্মা সেতু দিয়ে ২২ হাজার ৭০৬টি যানবাহন চলাচল করে। যা থেকে একদিনেই আদায় হয় ২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭০০ টাকা।
এ ধারাবাহিকতা ছিল পরের দিন ৪ নভেম্বরও (শনিবার)। এদিন পদ্মা সেতুতে ২০ হাজার ২৩৪টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা।
৫ নভেম্বর (রোববার) থেকে আবার অবরোধের ডাক দেওয়া হলে পদ্মা সেতুতে যানবাহন কমতে থাকে। ১১ হাজার ৪টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৭০০ টাকা।
প্রায় একই অবস্থা দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু ও মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের ক্ষেত্রেও।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব পাভেল বলেন, শনিবার রাজনৈতিক দলের অবরোধ কর্মসূচি না থাকায় মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এদিন বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব টোল প্লাজা দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন পারাপার হয়েছে ১০ হাজার ৬৫৫টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ১ হাজার ৯৫০ টাকা।
একই দিন সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজায় উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যানবাহন পারাপার হয়েছে ১১ হাজার ৫১টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ৯৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা।
পক্ষান্তরে রোববার রাজনৈতিক দলের অবরোধ কর্মসূচি থাকায় মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ছন্দপতন ঘটে। এদিন সেতুর পূর্ব টোল প্লাজা দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন পারাপার হয়েছে ৭ হাজার ৯৪৫টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ৭৬ লাখ ৪২ হাজার ৩০০ টাকা।
একই দিন সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজায় উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬ হাজার ২টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ৫১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা।
প্রকৌশলী আহসান হাবিব পাভেল আরও বলেন, অবরোধ এবং সাধারণ দিনের মধ্যে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবধান ছিল ৭ হাজার ৭৫৯টি। আর টোল আদায়ের পরিমাণে ব্যবধান ছিল ৬৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ টাকা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় জানায়, সোমবার অবরোধ ছিল; ওইদিন টোল সংগ্রহ হয়েছে ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা৷ যানবাহন অতিক্রম করেছে ২২ হাজার ৪৭২টি৷
তার আগের দিন রোববার অবরোধ ছিল না; সেদিন ৪০ হাজার ১৫৪টি যানবাহন থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা টোল সংগ্রহ করা হয়েছে৷
সওজের নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে মেঘনা-গোমতী সেতুর এ টোল প্লাজায় (মেঘনা টোল প্লাজা) দৈনিক কোটি টাকার উপরে টোল সংগৃহীত হয়।”
সড়কে গাড়ি কম চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, “অবরোধের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ পথে কিছু সংখ্যক বাস চলাচল করে থাকে। কিন্তু যাত্রী সংকট এবং নিরাপত্তার অভাবে দূরপাল্লার বাসগুলোর মালিকরা সড়কে বাস নামাতে চায় না।
“এমন অবস্থা শুধু সিরাজগঞ্জ নয়, সারাদেশেই”, বলেন আতিক।