২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বন্দর কার্যক্রম পুরোপুরি শুরুর আশা করছে বিআইডব্লিইটিএ।
Published : 12 Apr 2023, 09:26 AM
নানা জটিলতায় মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও পাবনার নগরবাড়ী আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
তিন বছরের প্রকল্পটি চার বছরেও শেষ না করতে পারায় সম্প্রতি আরও দুবছর সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক মহিদুল ইসলাম জানান।
নির্মাণকাজে ধীরগতিতে পণ্য খালাস ও পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বন্দর কার্যক্রম পুরোপুরি শুরুর আশা করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ – বিআইডব্লিইটিএ।
নগরবাড়ী বন্দর কর্মকর্তা ওয়াকিল আহমেদ জানান, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজে আমদানির পর পাবনার নগরবাড়ী থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় কয়লা, সার, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবহন সুবিধা বাড়াতে ২০১৮ সালে ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ শুরু করে সরকার। তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্প ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর কাজ বন্ধ ছিল।
পরে অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা দিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়।
এদিকে, নির্মাণ কাজে দীর্ঘসূত্রতা ও ধীরগতিতে পণ্য খালাস ব্যাহত হওয়ায় নগরবাড়িতে ভিড়ছে না বড় জাহাজ। এতে আমদানি-রপ্তানি কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা, লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যমুনার পাড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে ইট-লোহা-বালুসহ নানা নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ চলতে থাকায় এখানে আমদানি পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে।
নগরবাড়ী ঘাট এলাকার আমদানিকারক নওয়াপাড়া গ্রুপের প্রতিনিধি আরমান হোসেন বলেন, “আমাদের আমদানি করা সার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের জন্য নগরবাড়ী ঘাটে নিয়ে আসা হয়। এখানে নির্মাণকাজ চলতে থাকায় এবং নদীতে পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকায় এখন বেশিরভাগ পণ্য যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে আনলোড করা হচ্ছে।”
নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এ বন্দরে বড় জাহাজ নিয়ে এসে পণ্য খালাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানান আরমান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি রাজিব হোসেন বলেন, “নগরবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় সার, কয়লা, পাথর ও অন্যান্য আমদানি পণ্য সরবরাহ করা অনেক সহজ। সেখান থেকে সড়ক পথে কম খরচে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হয়। তবে বন্দর আধুনিকায়ন কাজ ধীরগতিতে চলতে থাকায় পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। আমদানিকারকরা বাধ্য হয়ে সেসব পণ্য দক্ষিণাঞ্চলের নওয়াপাড়া বন্দরে খালাস করছেন। নওয়াপাড়া থেকে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে পৌঁছতে ট্রাকপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। সময়ও অনেকটা বেশি লাগছে।”
নগরবাড়ী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এ কে এম রফিকউল্লাহ বলেন, “স্বাভাবিকভাবে নগরবাড়ী নৌবন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে বন্দর আধুনিকায়নের কাজ শুরু হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক অবস্থা নেই।”
প্রকল্প পরিচালক মহিদুল ইসলাম জানান, করোনাকালীন কাজের ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে; বর্ষাকালে কাজ ধীর গতিতে এগোয়। তাছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। তাই আবার সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। বর্তমান বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের ব্যয় পুনর্নির্ধারণের জন্য কারিগরি কমিটি কাজ করছে।
সম্প্রতি বন্দর নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তারা জানান, বাণিজ্যিক কারণে নির্মাণ ও আমদানি একইসঙ্গে চলমান থাকায় ধীরগতিতে হলেও শেষ হয়েছে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই বন্দর কার্যক্রম পুরোপুরি শেষ করার আশা করছে বিআইডব্লিইটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, একটি আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে জেটি নির্মাণের কাজ এখনও বাকি আছে। অটোমেশন পদ্ধতিতে বন্দরটি চালু হলে একসঙ্গে ১০টি কার্গো-জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। এতে পণ্য পরিবহনে গতি বাড়বে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।