গৃহকর্মী মালতি সেন ২২ এপ্রিল চিকিৎসক ফারহানা ফারিয়ার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা করেন।
Published : 26 Apr 2024, 10:41 PM
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে এক নারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
গৃহকর্মী মালতি সেন ২২ এপ্রিল চিকিৎসক ফারহানা ফারিয়ার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি করেন। শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মালতি সেন সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নাটাই গ্রামের মৃত মনি সেনের স্ত্রী। তিনি তার একমাত্র ছেলে মাধব সেনকে নিয়ে জেলা শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
ফারহানা ফারিয়া জেলা শহরের গ্লোবাল অর্থোপেডিক্স জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং নাজ মেডিকেল সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিআইডির পরিদর্শক মোবারক হোসেন সরকার শুক্রবার বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকালে মামলাটির তদন্তের নির্দেশের কপি হাতে পেয়েছি। মামলার বাদীকে শনিবার কার্যালয়ে আসতে বলেছি।
“ঘটনার তদন্তে সত্যতা যা পাওয়া যাবে প্রতিবেদনে তাই উল্লেখ করা হবে। ওই নারী ন্যায়বিচার পাবেন।”
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, ২০২২ সালের শেষদিক থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসক ফারহানা ফারিয়ার মুন্সেফপাড়ার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন মালতি সেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি চিকিৎসকের দুই মাস বয়সী কন্যাশিশুকে দেখাশোনা ও রান্নাবান্নার কাজ করতেন। কাজের বিনিময়ে খাওয়া-দাওয়াসহ প্রতি মাসে আট হাজার টাকা করে বেতন পেতেন মালতি।
কয়েক মাস যাওয়ার পরই গৃহকর্মী মালতির সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন চিকিৎসক ফারহানা। তিনি মালতিকে গালিগালাজসহ মারধর করতেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছয় মাস পর কাজ ছেড়ে দেন মালতি।
মামলায় বলা হয়, পরে চিকিৎসকের অনুরোধে আবার কাজে যোগ দেন মালতি। কয়েক মাস ভালো চলার পর আবার আগের মতো খারাপ আচরণ, গালিগালাজ ও মারধর শুরু করেন ফারহানা। অতিষ্ঠ হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ ছেড়ে দেন মালতি। তখন মালতির দেড় মাসের বেতন বাবদ ১২ হাজার টাকা পাওনা ছিল চিকিৎসকের কাছে।
২০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে পরিচিত মুন্নি আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে পাওনা টাকা আনতে যান মালতি চিকিৎসক ফারহানার বাসায় যান। সেসময় ফারহানা কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে মালতিকে কিল-ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মারেন। এক পর্যায়ে মালতির শাড়ি দিয়ে তাকে গলায় পেঁচিয়ে ধরেন। সেসময় সঙ্গে থাকা মুন্নি এগিয়ে গিয়ে মালতিকে রক্ষা করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী মালতি সেন বলেন, “আমার গলায়, বাম হাতে এখনো আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। ম্যাডাম আমাকে শুধু শুধু গালিগালাজসহ মারধর করতেন। উনার শিশুটার প্রতি মায়া জন্মে গিয়েছিল তাই আবার কাজ নিয়েছিলাম। কিন্তু ওনার নির্যাতন দিন দিন বাড়ছিল।”
তিনি বলেন, “আমার ছেলে শহরের নাজ মেডিকেল সেন্টারে এক্সরে বিভাগে কাজ করে। মামলা করায় এখন তিনি আমার ছেলেকে কাজ থেকে বের করে দিতে চাইছেন। আমি দেড় মাসের বেতন চাই। নির্যাতনের বিচার চাই। গরিব হলেও আমি তো মানুষ।”
মালতি সেনের আইনজীবী নাসির মিয়া বলেন, “মানবপাচার আইন-২০১২ এর ৯ ধারায় জবরধস্তিভাবে কাজে বাধ্য করাসহ নির্যাতনের ধারায় চিকিৎসক ফারহানা ফারিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মালতি। তার গলায় ক্ষতের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে।”
এ বিষয়ে কথা বলতে ফারহানা ফারিয়ার মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।