জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদপ্তর গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয় ও কারাগার কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
Published : 09 Oct 2022, 04:44 PM
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের নারী বন্দিদের সংশোধন করে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কারাগারে বসেই এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন তারা।
কারা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দিদশা শেষে এ প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে তারা টাকা রোজগারের সুযোগ পাবেন এবং এর মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কাটিয়ে পরিবারের রোজগারের উৎস হয়ে উঠতে পারবেন।
আর নারী বন্দিদের প্রত্যাশা, এর মাধ্যমে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে পরিবার ও দেশের জন্য কাজ করতে পারবেন।
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের নারী বন্দিরা সেলাই মেশিনের ব্যবহার, কাপড় কাটা ও পোশাক তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিখছেন। এরই মধ্যে অনেকে পোশাক তৈরির কাজ রপ্ত করেছেন। তারা পেটিকোট, ব্লাউজ, সালোয়ার-কামিজ তৈরি করতে পারছেন।
জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদপ্তর গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয় ও কারাগার কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা আলামিন মোল্লা জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে জেলা কারাগারে বন্দি নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ শুরু হলেও মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০২০ সালের শুরুর দিকে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার দিক নির্দেশনায় এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আবার শুরু করেন তারা।
এখানে ১৩টি সেলাই মেশিন দিয়ে একসঙ্গে ১৩ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক রোজিনা সপ্তাহে তিন দিন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা করে কারগারের নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ জেলা কারগারের জেলার মো. মোশফিকুর রহমান বলেন, “নারী বন্দিরা এখানে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে দর্জি কাজের অনেক কিছুই শিখতে পারছেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা এটিকে কাজে লাগিয়ে টাকা রোজগারের সুযোগ পাবেন।
“এর মাধ্যমে অপরাধীর হাত কর্মীর হাতে পরিণত হবে। তারা পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে আবদান রাখবেন। এটিই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা তাদের সেই ভাবেই সচেতন করে তুলতে পরামর্শ দিচ্ছি।”
জেলা কারাগারের সুপার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, নারী অপরাধীদের সংশোধন করে পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে কারাগারে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। এখানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার নিয়মিত প্রশিক্ষণ তদারকি করছেন। আমরাও এ কাজে সহায়তা করছি।
“সেই সঙ্গে নারী বন্দিদের অপরাধ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সচেতন করছি।”
প্রশিক্ষক রোজিনা বলেন, “এখানে প্রশিক্ষণার্থীরা খুবই মনোযোগী। তারা ইতোমধ্যে সেলাই মেশিন ব্যবহার, সেলাই করা, ব্লাউজ, পেটিকোট, সালেয়ার, কামিজ কাটিং শিখেছেন। অনেকে পোশাক তৈরি করাও শিখে ফেলেছেন। এদের পুনর্বাসন করা হলে পরিবারও উপকৃত হবে।”
“তারা সংসারের কাজের পাশাপাশি মাসে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা আয় করতে পারবেন। এতে তাদের সংসারে স্বাচ্ছন্দ আসবে,” যোগ করেন তিনি।
প্রশিক্ষণার্থী নারী বন্দি সেলিনা সুলতানা বলেন, “সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি। সেলাই মেশিন চালাতে পারছি। এখন কাটিং শিখছি। প্রশিক্ষণটি বেশ ভাল। এখান থেকে কাজ শিখে দর্জি হতে পারব।”
ফাতেমা বেগম নামের আরেক বন্দি বলেন, “পুরোপুরি প্রশিক্ষণ নিয়ে এই কোর্স সমাপ্ত করব। এখান থেকে বেরিয়ে বাড়িতে বসে দর্জি কাজ করার ইচ্ছা আছে। আমাকে সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হলে আমি কাজ করে মাসে অন্তত ৫০০০ টাকা আয় করতে পারব।
“এর পাশাপাশি সংসারের কাজ করে ভালো সময় কাটবে। কাজের মধ্যে থাকলে অপরাধ চিন্তা মাথা থেকে বের হয়ে যাবে। আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে পরিবার ও দেশের জন্য কাজ করতে পারব।”
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সবাইকে সামিল করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই আমরা জেলা কারাগারের নারী বন্দিদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
“তাদের হাতকে আমরা কর্মীর হাতে পরিণত করতে চাই। তারা কারগার থেকে বের হয়ে প্রশিক্ষণলভ্য জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় অবদান রাখবেন।”