বাগমারা থানার ওসি বলেন, “দুটি ঘটনায় এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।”
Published : 17 Dec 2023, 10:36 PM
রাজশাহী-৪ আসনের বাগমারা উপজেলায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হকের সমর্থকদের মধ্যে রোববার দুপুরে উপজেলার গঙ্গাপাড়া এবং সন্ধ্যায় ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড়ে এ দুটি ঘটনা ঘটে।
বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, “দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে উভয় পক্ষকে সরিরে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার দুপুরে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের গাঙ্গোপাড়া মোড়ে মাহাবুর রহমান (৪২) নামের নৌকা প্রতীকের একটি ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিবকে হাতুড়িপেটা করার ঘটনা ঘটে। মাহাবুরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মাহাবুর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের অনুসারী এবং যাত্রাগাছি ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব। তিনি মাড়িয়া ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি। তার বাড়ি তেলিপুকুর এলাকায়।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের অনুসারী উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে মুখোশধারীরা ওই হামলা করে বলে অভিযোগ করেছেন আহত মাহাবুর রহমান।
তবে আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংসদ সদস্য এনামুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার স্থলে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এ আসনে এই দুজন ছাড়াও জাতীয় পার্টির আবু তালেব প্রামাণিক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সাইফুল ইসলাম ও রাজশাহী জেলা যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বাবুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, দুপুরে গাঙ্গপাড়া মোড়ে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন মাহাবুর রহমান। এ সময় চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন মুখোশধারী যুবক সেখানে আসেন। তারা মাহাবুরকে চায়ের দোকান থেকে ধরে সড়কের ওপর নিয়ে যান।
একপর্যায়ে তাকে সড়কের ওপর ফেলে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে গেলে তারা পালিয়ে যান। পরে আহত মাহাবুরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
আহত মাহাবুর রহমান বলেন, “নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের সমর্থক আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবুর নেতৃত্বে তাকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করা হয়েছে। তারা মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়েছেন।”
তবে হামলায় নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কৃষক লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, “আমি সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে আলোর পথে এসেছি। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। এই হামলার মাধ্যমে একটা গেইম খেলা হচ্ছে।”
এদিকে, রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের ওপরে হামলা চালিয়েছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। এ সময় তারা ছয়জনকে মারধর করে। প্রদর্শন করা হয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে মোতায়েন করা হয় পুলিশ।
আহতরা হলেন- উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবি, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আলী, সিনিয়র সহসভাপতি মাইনুল ইসলাম, সহসভাপতি মাহাবুর রহমান, আওয়ামী লীগ কর্মী মাজেদুর রহমান ও মাসুদ রানা রিগেট।
৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, “নৌকা ছাড়া কোনো কথা হবে না- এমন হুমকি দিয়ে নৌকার প্রার্থীর লোকজন আমাদের ওপরে হামলা চালায়। এ সময় পৌরসভার কাউন্সিলর এরশাদ আলীর পিস্তল বের করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবির মাথায় ধরে। প্রতিবাদ করতে গেলে অন্যদেরকে পিটিয়ে জখম করে তারা।”
স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন প্রতিনিয়ত তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। একের পর এক হামলা করে তার সমর্থকদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। তিনি হামলা ও হুমকি-ধমকি দেওয়া ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান।
এ দুটি ঘটনার বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে তার অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি কিংবা সংসদ সদস্য বিষয়টি জানেন না। তিনি ফেইসবুকে হামলার ভিডিও দেখে গাঙ্গপাড়ার ঘটনাটি জেনেছেন।
তিনি বলেন, ওই ঘটনায় তাদের কোনো যোগসূত্র নেই। তারা ভোট চাওয়া নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তবে ওই ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় তাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মাথায় পিস্তল ধরেছে। এর প্রতিবাদ এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, “দুটি ঘটনায় এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”