এনামুলের তৈরি শস্যচিত্র দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়ছে। তাদের কেউ কেউ শস্যচিত্রের সঙ্গে সেলফি তোলেন, অনেকে আবার ভিডিও করেন।
Published : 17 Mar 2024, 03:27 PM
যতদূর চোখ যায় শুধু ধানক্ষেত।তারই মাঝখানে সবুজ আর বেগুনি রঙের ধান দিয়ে নিপুণভবে তৈরি করা হয়েছে ভালবাসার প্রতিকী চিহ্নের আদলে তৈরি একটি শস্যচিত্র। তাতে চোখ আটকে যায়, বহুদূর থেকে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাশাহরা গ্রামের মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের পাশেই শস্যচিত্রটির দেখা মিলবে। এটি তৈরি করেছেন ওই গ্রামের কৃষক ও পান-সুপারি ব্যবসায়ী এনামুল হক; তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘ভালোবাসা’।
ওই গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে ৪২ বছর বয়সী এনামুল এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। পেশায় পুরোদস্তুর কৃষক হলেও মাঠের কাজ শেষে প্রতিদিন বিকাল থেকে শ্রীপুর পৌর শহরে পান-সুপারির দোকান চালান।
একেবারে শখ থেকে এই শস্যচিত্র তৈরি করেছেন বলে জানালেন এনামুল।কীভাবে তৈরি করেছেন? জানতে চাইলে বলেন, এবারের শস্যচিত্র তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেছেন বেগুনি ও বঙ্গবন্ধু জাতের দুই ধরনের ধানের বীজ। প্রথমে জমিতে দড়ি দিয়ে কাঠামো তৈরি করেন। এর পর সময় নিয়ে নিখুঁতভাবে সেখানে রোপন করেন ধানের চারা।
২০২২ সাল থেকে এনামুল নিয়মিত তার জমিতে শস্যচিত্র তৈরি করছেন বলেও জানান।
যাত্রা শুরুর গল্পে তিনি বলেন, ২০২১ সালে নিজের আধা বিঘা জমিতে প্রথম বেগুনি রঙের ধান চাষ করেন। পরের বছর ওই রঙিন ধান দিয়ে ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা জাগে তার।
তারই প্রেক্ষিতে মায়ের প্রতি ভালবাসার প্রতীক হিসাবে সে বছর রঙিন ধান দিয়ে জমিতে তৈরি করেন ‘মা’ শব্দের শস্যচিত্র। ২০২৩ সালে একই জমিতে গড়েন শস্যচিত্র ‘জাতীয় পতাকা’। এরপর থেকে নিয়মিত শস্যচিত্র গড়ে যাচ্ছেন।
এনামুলের তৈরি শস্যচিত্র ‘ভালোবাসা’ দেখতে প্রতিদিনই লোকজন আসছেন।সকালে তেমন দর্শনার্থীদের না থাকলেও বিকাল হতে না হতেই বেড়ে যায় আনাগোনা। তাদের কেউ কেউ শস্যচিত্রের সঙ্গে সেলফি তোলেন, অনেকে আবার ভিডিও করেন।
এনামুলের শস্যচিত্র দেখতে বনোভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া থেকে এসেছিলেন লুৎফর আলম। তিনি শস্যচিত্র ‘জাতীয় পতাকা’ দেখতে এসেছিলেন বলেও জানান।
আরেক দর্শনার্থী শ্রীপুরের সিংগারদিঘির আনোয়ার হোসেন বলেন, “একজন সৌখিন মানুষের এমন শিল্পকর্ম দেখতে ভালো লাগছে। শ্রীপুর তথা গাজীপুরে আর কোথাও কেউ এমন শস্যচিত্র গড়েনি।”
দর্শনার্থীরা আসছেন, কেমন অনুভূতি হচ্ছে জানতে চাইলে এনামুল বলেন, “মানুষ আমার তৈরি শস্যচিত্র দেখতে আসে। এটা যে কী আনন্দ; তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। তাদের উৎসাহ দেখে আমি আরও উৎসাহ পাই।
কাজটি প্রতি বছর অব্যাহত রাখতে চান বলেও জানান তিনি।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, “কৃষক এনামুলের শস্যচিত্রের কথা শুনেছি। একজন কৃষকের এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।”