সূচনা ৮৮, সাক্কু ১৫ এবং কায়সার দুটি কেন্দ্রে জয় পেয়েছেন। তানিম কোথাও বিজয়ী হননি।
Published : 11 Mar 2024, 11:45 PM
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনের ভোট শেষ হলেও কোন প্রার্থী কোন কেন্দ্রে কত ভোট পেয়েছেন তা নিয়ে এখন ভোটারদের মধ্যে চলছে আলোচনা-বিশ্লেষণ।
শনিবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বাস প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি কুমিল্লার প্রথম নারী মেয়র হলেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে সূচনা ৮৮টি কেন্দ্রে অন্যদের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন।
দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ১৫টি এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে দুটি কেন্দ্রে জয় পেয়েছেন।
তবে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম হাতি প্রতীক নিয়ে কোনো কেন্দ্রে নিজের পক্ষে সর্বোচ্চ ভোট টানতে পারেননি।
যদিও ভোটগ্রহণের পর তাহসীন বাহার সূচনা ছাড়া বাকি তিন প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন।
তাদের অভিযোগ, বাস প্রতীকের নেতাকর্মীরা ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়ে ভোটকে ‘নিয়ন্ত্রিত’ করেছে; এতে জয়ী হয়েছেন সূচনা।
তবে এসব অভিযোগ শুরু থেকেই ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন সূচনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন হয়েছে ‘সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে’।
জামানত হারিয়েছেন তানিম
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটির মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন। এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৯৪ হাজার ১১৫ জন। ভোটের হার ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
তাহসীন বাহার সূচনা পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৮৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮৯৭ ভোট।
এ ছাড়া নিজাম উদ্দিন কায়সার ১৩ হাজার ১৫৫ ভোট এবং নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম পেয়েছেন ৫ হাজার ১৭৩ ভোট।
নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী, মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট কোনো প্রার্থী না পেলে তিনি জামানত হারাবেন। সে হিসাবে নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম জামানত হারিয়েছেন।
কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল
মনিরুল হক সাক্কু ভোট দিয়েছেন নগরীর হোচ্ছামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৩০৯ ভোট। আর সূচনা পেয়েছেন ৩২৯ ভোট। এ কেন্দ্রে নিজাম উদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ১১৩ ভোট আর তানিম পেয়েছেন ৫৯ ভোট।
সাক্কু তার বাড়ির সামনের শৈলরানী দেবী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রসহ আশপাশের প্রায় সবকটি কেন্দ্রেই সূচনার কাছে পরাজিত হয়েছেন।
বাড়ির কাছের কেন্দ্রগুলোর মধ্যে শুধু দক্ষিণ চর্থা এলাকার হোচ্ছামিয়া লুৎফুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজয়ী হয়েছেন মনিরুল হক সাক্কু। ওই কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৩৫৫ ভোট। সূচনা পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট আর কায়সার পেয়েছেন ২৮৬ ভোট।
তাহসীন বাহার সূচনা ভোট দিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে। নিজ কেন্দ্রে তিনি ৬৬০ ভোট পেয়েছেন। এ কেন্দ্রে সাক্কু পেয়েছেন ২০১ ভোট। কায়সার ৫৮ আর তানিম ৭০ ভোট।
একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি কেন্দ্রে সূচনা পেয়েছেন ১৬৭ ভোট। আর সাক্কু পেয়েছেন ৫৭ ভোট।
নিজাম উদ্দিন কায়সার এবং নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম ভোট দিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে। ওই প্রতিষ্ঠানের দুটি কেন্দ্রেই বিজয়ী হয়েছেন সূচনা।
কায়সার শুধুমাত্র নগরীর কাটাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হাউজিং এস্টেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজয়ী হয়েছেন।
কাটাবিল কেন্দ্রে কায়সার পেয়েছেন ৩৯২ ভোট। সেখানে সূচনা পেয়েছেন ৩৪৪ আর সাক্কু পেয়েছেন ২৮৬ ভোট।
হাউজিং এস্টেট কেন্দ্রে কায়সার পেয়েছেন ৩৪৪ ভোট। এ কেন্দ্রে সূচনা ৩১১ আর সাক্কু ২১১ ভোট পেয়েছেন।
‘ধারণার মিল’ ভোটে
নবনির্বাচিত মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা। বাহারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে কুমিল্লা প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আফজল খানের পরিবারের।
এই পরিবারের পক্ষে এখন নেতৃত্বে দিচ্ছেন তার মেয়ে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনি আওয়ামী লীগের মহানগর শাখার উপদেষ্টা। আগে এই কমিটির সহসভাপতি ছিলেন।
নগরীতে আওয়ামী লীগের মূলধারার নিয়ন্ত্রক মূলত বাহার। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রায় সব নেতাই তার অনুসারী। তবে বাহার-বিরোধীরা আছেন সীমার পক্ষে।
আফজল খানের এলাকা নগরীর ঠাকুরপাড়া। যদিও এবার নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন এই পরিবারের অনুসারীরা।
আফজল খানের বাড়ির পাশের কেন্দ্র গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজয়ী হয়েছেন মনিরুল হক সাক্কু। ওই কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৩৭৭ ভোট। আর সূচনা পেয়েছেন ৩২৫ ভোট।
এই এলাকার আরেক কেন্দ্র কুমিল্লা মর্ডান স্কুলের প্রাইমারি শাখায়ও বিজয়ী হয়েছেন সাক্কু। তিনি পেয়েছেন ২৭২ ভোট। আর সূচনা পেয়েছেন ২২৮ ভোট।
এ ছাড়া এই এলাকার বাকি কয়েকটি কেন্দ্রে বিজয়ী হতে না পারলেও সূচনা ও সাক্কু কাছাকাছি ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচনি প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে অনেক ভোটারই অভিমত দিয়েছিলেন যে, আফজল খানের পরিবারের বলয়ের ভোট হয়ত সাক্কুর দিকে যেতে পারে।
যদিও সাক্কুকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ভোটের আগের দিন শুক্রবার সীমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “সমর্থন দেওয়ার মতো কি কিছু আছে? মুখ আছে বলে দিলে তো হলো না। কোনো প্রমাণ যদি থাকে।”
তবে কেন্দ্রভিত্তিক ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, আফজল খানের এলাকাতে ঘড়ি প্রতীকের সাক্কু তুলনামূলক ভাল করেছেন।
কুমিল্লায় খান পরিবার কোন দিকে?
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, “উপনির্বাচন অত্যন্ত অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। এটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।”
সবশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।