ট্রাক চাপা দেওয়ার আগে থেকে ওই কর্মকর্তাকে পাচারকারীরা মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল বলে জানায় কক্সবাজার পুলিশ।
Published : 09 Apr 2024, 07:26 PM
কক্সবাজারের উখিয়ায় মাটির পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত রাখায় ‘পরিকল্পিতভাবে’ ডাম্প ট্রাকের চাপায় বনবিট কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রধান আসামি মো. বাপ্পীকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের (উখিয়া সার্কেল) জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের বন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাপ্পীকে (২৩) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা এলাকার মো. কাশেমের ছেলে এবং ডাম্প ট্রাকের চালক।
৩১ মার্চ মধ্যরাতে উখিয়ায় সংরক্ষিত বনে অভিযানে গিয়ে ‘মাটি পাচারকারীদের ড্রাম্প ট্রাকের চাপায়’ বনবিট কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান সজল (৩০) প্রাণ হারান।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় উখিয়া থানায় সংবাদ সম্মেলনে সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল বলেন, মাসখানেকের বেশি সময় ধরে উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটে মাটির পাচার করে আসছিল সংঘবদ্ধ একটি চক্র। মাটি বিক্রিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সাজ্জাদুজ্জামান।
ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে অভিযান চালিয়ে মাটি পাচারকারী চক্রের পাঁচটি ডাম্পার ট্রাক জব্দ এবং একাধিক মামলা করেন তিনি। এ নিয়ে চক্রটির লোকজন সাজ্জাদুজ্জামানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে সহকারী পুলিশ বলেন, “ট্রাক জব্দ এবং মামলার ১০ নম্বর আসামি কামাল উদ্দিন ড্রাইভারসহ মাটি পাচারকারীরা সাজ্জাদুজ্জামানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। মোবাইল ফোনে এবং নানাভাবে তাকে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল চক্রটি। এমনকি তারা সাজ্জাদুজ্জামানকে প্রাণে মারারও হুমকি দেয়।
“ঘটনার দিন রাতে হরিণমারায় সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি পাচারের খবরে বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান সহকর্মী আলী আহমদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে যান। সেই সময় ডাম্প ট্রাকের চালককে থামার নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু চালক না মেনে মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে সাজ্জাদুজ্জামান নিহত হন।”
ঘটনার সময় ট্রাকচালক বাপ্পীর পাশের আসনে কামাল উদ্দিন ছিলেন; তার ইন্ধনে মোটরসাইকেলটি চাপা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান মোহাম্মদ রাসেল।
মাটি পাচার চক্রটির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে; এসব যাচাই বাছাই করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
নিহত বনবিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান মুন্সিগঞ্জের গজরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
এ ঘটনায় আহত বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী (২৭) টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মঞ্জুরের ছেলে।
ঘটনায় পরদিন উখিয়া রেজ্ঞ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
পরে রাতে নাইক্ষ্যংছাড়ি উপজেলার পরিত্যক্ত ইটভাটা থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়। পরদিন ভোরে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
উখিয়ায় বন কর্মকর্তা হত্যা: প্রধান আসামি চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার