সাংবাদিক শামসের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

শিক্ষার্থীরা সাংবাদিক শামসের রোববারের মধ্যে মুক্তি দাবি করেছেন, নাহলে আবার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2023, 11:23 AM
Updated : 31 March 2023, 11:23 AM

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর এলাকা থেকে একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে তারা।

আধা ঘণ্টা অবরোধ চলার পর 'রোজার মাসে মানুষের কষ্ট' বিবেচনায় নিয়ে নিজেরাই অবরোধ তুলে নেয়।

শিক্ষার্থীরা সাংবাদিক শামসের রোববারের মধ্যে মুক্তি দাবি করেছেন। মুক্তি না দিলে আবার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এ সময় অবরোধকারীরা শামসের মুক্তি এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন।

এ সময় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত দে বলেন, “আজকে কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা উপস্থিত হইনি। শামস ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, আমাদের অগ্রজ ছিলেন। একজন সাংবাদিক হিসেবে তিনি সংঘটিত ঘটনা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই কাজ করতে গিয়েই তিনি রাষ্ট্রের রোষানলে পড়েছেন।”

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ফেরদৌস বলেন, “মাছ-ভাতের স্বাধীনতা সংবাদপত্রে তুলে ধরা কী অপরাধ? দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির সংবাদ প্রকাশের কারণে শামস ভাইকে আজকে জেলে যেতে হয়েছে। একজন সাংবাদিক, যিনি দেশের মানুষের কথা বলেন, তাকে রাতের আঁধারে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানাই।”

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, “স্বাধীনতার নামে কী হচ্ছে আমাদের দেশে? একটি রাষ্ট্রের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির একটি প্রতিবেদন করা হয়েছে। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের একটি চিত্র। এই সামান্য একটি প্রতিবেদন করার ফলে একজন সাংবাদিককে রাতের আঁধারে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া লজ্জাজনক।”

“একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে একজন সাংবাদিককে চোরের মতো তুলে নেওয়া হয়েছে। বুধবার সারাদিন আমাদের সঙ্গে নাটক করা হয়েছে, কেউই স্বীকার করেনি শামস ভাই কোথায় আছেন। একজন সাংবাদিক এত ঘণ্টা আটক যখন ছিল তখন এই রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা কীভাবে দিচ্ছিল?”

এ সময় তিনি সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। অবিলম্বে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো নিবর্তনমূলক আইনও বাতিলের দাবি জানান তিনি।

এদিকে অবরোধকে ঘিরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কাজ করতে পারে সেজন্য নিরাপত্তা দিতে এসেছি। কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সেটার দিকেও খেয়াল রাখছি।”

অবরোধ চলাকালীন উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়েছি যাতে তাদের সঙ্গে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। রমজানের দিনে মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করতে বলায় তারা বিবেচনায় নিয়ে অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছে।”

“অবরোধের ইস্যুটা যেহেতু রাষ্ট্রীয়, রাষ্ট্রই এটার সমাধান করবে। আইনসম্মতভাবেই সমাধান হবে।”

শামস প্রথম আলোর সাভারে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক। তিনি থাকতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া আমবাগান এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পাস করেন তিনি।

স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে বুধবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক।

সেখানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘হুকুমের আসামি’ এবং নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ আসামি করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে এর আগে তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া। সেই মামলায় কেবল শামসকেই আসামি করা হয়।

তেজগাঁও থানার সেই মামলার খবর প্রকাশ্যে আসার আগেই বুধবার ভোর রাতে শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে ‘সিআইডি পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

সিআইডি তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক, শামসের বাড়িওয়ালা এবং পাশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, যারা শামসকে ধরে নিয়ে গেছেন, তারা সিআইডি পুলিশ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে, পুলিশ আটক করতেও পারে। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে শামসকে আদালতে নেওয়া হয়।

শুক্রবার তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন:

Also Read: কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে সাংবাদিক শামস

Also Read: প্রথম আলো সম্পাদককে ‘হুকুমের আসামি’ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

Also Read: যুবলীগ নেতার মামলা সিআইডিতে, সাংবাদিক শামস কোথায়?

Also Read: কেউ বিচার চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে, বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Also Read: প্রথম আলোর শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

Also Read: ‘ডেকে নিয়ে’ শামসকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় সিআইডি, পরে গ্রেপ্তার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Also Read: সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি সিপিজে’র

Also Read: শামসকে আটকের ঘটনায় মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের উদ্বেগ

Also Read: প্রথম আলোর সাংবাদিক শামস কোর্ট হাজতে