‘ডেকে নিয়ে’ শামসকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় সিআইডি, পরে গ্রেপ্তার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মন্ত্রী বলছেন, “জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়ার পরে এই ঘটনায় সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মামলা হয়েছে… সেই মামলাগুলোর প্রেক্ষিতেই তাকে আবারও অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 09:43 AM
Updated : 30 March 2023, 09:43 AM

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে ‘তুলে নেওয়ার’ এক দিন পর তাকে ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেওয়ার’ কথা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তিনি এও বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শামসকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে আরও মামলা হওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে বুধবার ভোরের আগে শামসকে তুলে নেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী।

কৃষক লীগের ওই আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কটূক্তির কারণে প্রথম আলোর সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের একটি বাহিনী ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। এখন মামলার কারণে আটক দেখানো হয়েছে।”

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেখানে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”

ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়।

পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়। 

এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে তেজগাঁও থানায় শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন এক যুবলীগ নেতা।

বুধবার সকালে খবর আসে, শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘সিআইডি’ পরিচয় দিয়ে।

সেই বাড়ির বাড়িওয়ালা, প্রত্যক্ষদর্শী একজন স্থানীয় সাংবাদিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও পুলিশ কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন।

তেজগাঁও থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শামসকে আদালতে নেওয়া হতে পারে, সেই ধারণা থেকে বুধবার পুরান ঢাকার আদালত পাড়াতেও ভিড় জমান সাংবাদিকরা। কিন্তু সেখানেও তাকে নেওয়া হয়নি।

কাউকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু শামসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, তাই খোলাসা করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সর্বোচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনাও রয়েছে- কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে, গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে, গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।

বুধবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক।

সেখানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘হুকুমের আসামি’ এবং নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ আসামি করা হয়।

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন ‘লাইক, শেয়ার, কমেন্টকারী আরও অজ্ঞাতদের’ আসামি করেছেন বাদী। 

বৃহস্পতিবার সকালে খবর পাওয়া যায়, শামসকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়েছে। পরে রমনা থানার মামলায় তার জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সেই পত্রিকা যাকে মার্ক করেছিল (কার্ডে যে ছেলেটির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে) সেও এই উক্তিটি করেনি বলে জানিয়েছে, সেটা আপনারা একটি টিভিতে দেখেছেন। সেজন্য পুলিশের একটি বাহিনী তাকে (শামস) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়েছিল।

“তারা জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়ার পরে এই ঘটনায় সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মামলা হয়েছে এবং কয়েকটি মামলা অলরেডি হয়ে গিয়েছে। সেই মামলাগুলোর প্রেক্ষিতেই তাকে আবারও অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এই হচ্ছে ঘটনা।”

কাউকে তুলে আনা এবং এরপর যে আইনি সুবিধাগুলো দিতে হয়, সেগুলো নিয়ে কোনো কিছু না বলে মন্ত্রী কথা বলেন বিতর্ক তোলা সেই সংবাদ নিয়ে। তার মতে, স্বাধীনতা দিবসে যেভাবে সংবাদটি উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটি উচিত হয়নি।

মন্ত্রী বলেন, “একটা ঘটনা ঘটেছে… একটা সংবাদ… একটা তথ্যভিক্তিক নহে এমন একটি সংবাদ… এবং স্বাধীনতার দিনটিও আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করি।

“আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের বাংলাদেশ যেভাবে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেটাকে কটূক্তি করে একটা সংবাদ কোনো একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেটা আপনারা জানেন।”